স্টারলিংকে নিরাপত্তা ঝুঁকি বলছে হোয়াইট হাউস

নিজস্ব প্রতিবেদক 

হোয়াইট হাউসে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সময় বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ জানালেও ইলন মাস্কের লোকজন তা উপেক্ষা করেন বলে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, এমন তিনজনের বক্তব্যের ভিত্তিতে খবরটি প্রকাশের কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় ওই তিন ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেননি।

তারা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে মাস্কের ডিওজিই প্রতিনিধিরা হোয়াইট হাউজের পাশের আইজেনহাওয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস ভবনের ছাদে একটি টার্মিনাল বসান। কিন্তু ঘটনাটি হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের আগে থেকে জানানো হয়নি।

তাদের ভাষ্য, এ ধরনের সংযোগের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য বাইরে চলে যাওয়া কিংবা হ্যাকারদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর সক্ষমতা হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নেই।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার পর মাস্কের জন্য আলাদা একটি দপ্তর তৈরি করেন ট্রাম্প। সেই সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দপ্তর- ডিপার্টমেন্ট অব গভার্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি বা ডিওজিইর কাজ ছিল প্রশাসনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাঁট করে অর্থনৈতিক সাশ্রয় করা।

মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংকের টার্মিনালটি এখনও সেই ছাদে সচল আছে কিনা, কিংবা ইলন মাস্ক সরকার থেকে সরে আসায় সেটি সরানো হবে কিনা, তা নিশ্চিত হতে পারেনি ওয়াশিংটন পোস্ট।

তবে হোয়াইট হাউসের ওই ব্যক্তিদের তথ্যানুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে মোবাইল ফোনে ‘স্টারলিংক গেস্ট’ নামে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক দেখাত, যেখানে শুধু পাসওয়ার্ডই চাইত।

ব্যবহারকারীর নাম বা দ্বিতীয় স্তরের যাচাই পদ্ধতি ছিল না। এই ওয়াইফাই নেটওয়ার্কটি গেল সপ্তাহেও হোয়াইট হাউসে পাওয়া গেছে বলে দাবি তাদের।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, তারা এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য চেয়েছিল। কিন্তু তারা বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসে পাঠিয়ে দেয়।

সিক্রেট সার্ভিস বলেছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের মন্তব্য করার এখতিয়ার নেই।

সিক্রেট সার্ভিসের মুখপাত্র অ্যান্টনি গুগলিয়েলমি বলেন, “আমরা জানতাম ডিওজিই হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত করতে চাচ্ছে এবং আমরা এটিকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করিনি।”

হোয়াইট হাউসের অতিথিদের ফোন যখন ‘গেস্ট ওয়াইফাই’ নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়, তখন নাম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়, যা ট্র্যাক করা হয়। এই নাম ও পাসওয়ার্ডের মেয়াদ থাকে এক সপ্তাহ।

ওই তিন কর্মকর্তার একজন বলেন, কর্মীরা যেসব কম্পিউটারে কাজ করেন, সেগুলো কঠোর নিরাপত্তা প্রোগ্রাম লক করা থাকে। বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের যে কোনো যোগাযোগও নজরদারিতে রাখা হয়।

“কিন্তু স্টারলিংকে কিছুই লাগে না। এটা আপনাকে এমনভাবে তথ্য পাঠাতে দেয়, যেখানে কোনো রেকর্ড বা ট্র্যাকিংয়ের সুযোগ থাকে না।”

তিনি বলেন, “নেটওয়ার্কে হোয়াইট হাউসের আইটি সিস্টেমের জোরালো নিয়ন্ত্রণ থাকে। সব সময় পুরোপুরি ভিপিএন টানেলে থাকতে হয়। আপনি ভিপিএনে না থাকলে হোয়াইট হাউসের ডিভাইসগুলো বাইরের ইন্টারনেট সংযোগে কাজ করবে না।”

ওই তিনজনের আরেকজন বলেন, “স্টারলিংকের সংযোগ হোয়াইট হাউসের ডিভাইসগুলোকে বাইরের নেটওয়ার্কে যেতে বাধা দেয় না। এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাইপাস করতে সহায়তা করে।”

ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, এ বিষয়ে বক্তব্য চাইলেও স্টারলিংক কোনো সাড়া দেয়নি।

তবে প্রতিষ্ঠানটি আগেও বলেছে যে, তাদের স্যাটেলাইট সংযোগগুলো হ্যাক করা তুলনামূলক কঠিন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.