নিজস্ব প্রতিবেদক
আরবের কড়া রোদে পরিবারের মুখে হাসি দেখতে প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার সন্তান আবদুল মান্নান। হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে কষ্টে উপার্জিত টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সব দিয়েও শেষরক্ষা হয়নি।
যে মানুষের জন্য জীবনে এত কষ্ট করলেন, সেই মানুষটিই আদালতে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে বলছেন- ‘যৌতুক চেয়েছে’! ফলশ্রুতিতে দেশে ফিরেই তার ভাগ্যে জুটেছে হাতকড়া আর থানার হাজত।
জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসে থাকা আবদুল মান্নান সম্প্রতি দেশে ফিরেন। এরপর ৭ এপ্রিল স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুকের মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। ১৭ এপ্রিল আদালত থেকে জামিন পেয়ে ১৯ এপ্রিল কারামুক্ত হন মান্নান। তারপর থেকে মামলার ঘানি টেনেই যাচ্ছেন তিনি।
তবে আক্ষেপ তার অন্য জায়গায়। দীর্ঘ ২০ বছর আগেই প্রবাসে গিয়েছেন মান্নান। অথচ স্ত্রী যৌতুকের মামলায় বলেছেন প্রবাসে যেতে আড়াই লাখ টাকা দাবি করেছেন তিনি। ২০২২ সালের ১৩ জুলাই টাকাগুলো দাবি করা হয়েছে হলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মো. আবদুল মান্নান বিয়ে করেন কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকার রোমানা সিদ্দিকী রুমীকে। বিয়ের পর থেকেই রুমী লোহাগাড়ার শ্বশুরবাড়িতে থাকতে অনীহা প্রকাশ করতেন। এ নিয়ে মান্নানের সঙ্গে একাধিকবার মনোমালিন্য হয়।
মান্নান জানান, দুই সন্তানের মুখ চেয়ে অনেক কিছু সহ্য করেছি।স্ত্রীর মন রক্ষায় চকরিয়ায় জমি কিনে বাড়ি করে দিয়েছি। ২০২২ সালে দেশে ফিরে স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। চট্টগ্রাম শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে সন্তানদের লালন-পালনের উদ্যোগ নিয়েছি।
কিন্তু রুমী কিছুতেই রাজি হননি। ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর তালাকের হলফনামা প্রস্তুত করলেও পাঠাইনি। তার কয়েকদিন পর ২৩ নভেম্বর চকরিয়া আদালতে আমার বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা দায়ের করে রুমী। এতে তিনি অভিযোগ করেছেন আমি বিদেশ যাওয়ার জন্য তার পরিবারের কাছে যৌতুক দাবি করেছি। অথচ আমি গত ২০ বছর ধরে দুবাইয়ে প্রবাসে রয়েছি।
মান্নানের আইনজীবী বিপুল দাশ জানান, ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল রুমীকে তালাকনামা পাঠানো হয়। এরপর চার দফায় দেনমোহর আদায়ের জন্য নোটিশ পাঠানো হলেও রুমী কোনো সাড়া দেননি। তালাকের পর রুমী তা মেনে নিয়ে ২০২৪ সালে পুনরায় বিয়ে করেন। এই পরিস্থিতিতে পূর্বের করা যৌতুকের মামলা চলতে পারে না। এটি মূলত হয়রানির জন্য দায়ের করা হয়েছে।
লোহাগাড়া বড়হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনিরুল মাবুদ রয়েল বলেন, ছোটবেলায় বাবা হারানো মান্নান দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন। সম্প্রতি দেশে ফিরলে তার সাবেক স্ত্রী লোকজন নিয়ে এসে পুলিশ দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছেন। এসময় গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ জানায়।
এই বিষয়ে রোমানা সিদ্দিকী রুমী বলেন, আমি মান্নানের টাকা আত্মসাৎ করেছি-এ অভিযোগ সত্য নয়। বরং মান্নানই বিভিন্ন সময়ে আমার পরিবার থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়েছে। মান্নানের সঙ্গে তালাকের পর আমি অন্য একজনকে বিয়ে করি। কিন্তু মান্নানের হুমকির কারণে সেও আমাকে ছেড়ে চলে যায়।