জেটি অপারেশন ও কয়লা পরিবহনে বাঁধা, যে কোন মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বাঁশখালীর গন্ডামারা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র!

 

 

মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ

 

দেশের সর্ববৃহৎ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টটি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার  ও চীনের সেপকো থ্রির যৌথ মালিকানাধীন নির্মিত বিদ্যুৎ প্রকল্পটি ২০২৩ সালে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে দেশের ১০% বিদ্যুৎ সবচেয়ে কম দামে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে কয়লা উঠা নামানোর জন্য পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্রয়কৃত  নিজস্ব জায়গায় এবং নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত জেটিতে কয়লাবাহী লাইটার জাহাজ ভিড়াতে বাঁধা দিচ্ছে স্থানীয় জেলেরা। জেলেরা জোর পূর্বক মাছ ধরার জাল বসানো ও বোট চলাচলের ফলে লাইটার জাহাজ গুলো কয়লা নিয়ে জেটিতে ভিড়তে পারছে না, ফলে যে কোন মুহুর্তে কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্প টি।

 

সরেজমিনে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রকল্পে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রজেক্টের ড্রেজিং এর কাজ চলমান থাকায় প্রতিনিয়ত লাইটার জাহাজ গুলো জেটিতে আসতে শুরু করেছে। অনেক সময় লাইটার জাহাজ গুলোতে চুরি ডাকাতি সংঘটিত হচ্ছে। এই সাম্পান (বোট) বা জাল বসানোর কারনে প্রজেক্টের অপারেশন কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকল্পের জেটি সীমানায় কোন রকম জাল বসানো বা বোট ভিড়ানো বন্ধে উক্ত এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। অপর দিকে স্থানীয় জেলেদের পক্ষে আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জেটিঘাটে ড্রেজিং বন্ধ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন বলে শুনা যাচ্ছে।

 

এদিকে কয়েকজন জেলে জানায়, এ জেটিঘাটে জাল বসানো ও সাগরে ধরা মাছ উঠানো নামানোর সুবিধার্থে আমরা জেটি ঘাট টি ব্যবহার করছি। অনেক সময় লাইটার জাহাজের ধাক্কায় বসানো জাল ছিঁড়ে যাওয়া। এ ছাড়া ইলিশ মৌসুমে চার মাসব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল ভরসা এই ঘাট। কিন্তু নানা বাধার কারণে এখন এ অঞ্চলের অর্থনীতি মারাত্মক সংকটে পড়ছে বলে তারা জানান।

 

 

এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট সূত্রে জানা যায়,  এই পাওয়ার প্ল্যান্টটি দেশের বৃহত্তম একটি প্রজেক্ট। এই প্রজেক্ট নির্মিত হওয়ার পর জেটিঘাটটি শুধু মাত্র প্রজেক্ট এর কাজের স্বার্থে নির্মিত হয়েছে। এই

জেটিঘাট এলাকাটি প্রকল্পের নিজস্ব জায়গা। স্থানীয় কয়েকজন জেলেরা এই ঘাটে বোট এবং জাল বসানোর ফলে লাইটার জাহাজ গুলো কয়লা নিয়ে জেটিতে ভিড়তে পারে না, ইতিমধ্যে ড্রেজিং এর কাজ চলতেছে। প্রতিনিয়ত লাইটার জাহাজ গুলো জেটিতে আসতে শুরু করেছে। অনেক সময় আমাদের লাইটার জাহাজ গুলোতে চুরি ডাকাতি সংঘটিত হচ্ছে। এই সাম্পান (বোট) বা জাল বসানোর কারনে প্রজেক্টের অপারেশন কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

 

 

এ বিষয়ে এস.এস. পাওয়ার প্ল্যান্টের সাইট প্রজেক্ট ম্যানেজার ফয়জুর রহমান জানান, এই জেটি ও ব্রেক ওয়াটার এস.এস.পাওয়ার এর নিজস্ব সম্পত্তি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সকল আনুমতি মেনেই কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এই কয়লা বিদ্যুৎ টি চায়না সি এন্ড এইস (C&H) কোম্পানীর পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ১৫ দিনের জন্য ১ লক্ষ ১৫ হাজার মেট্রিক টন মজুত রয়েছে।  দৈনিক ১২ থেকে ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা পুড়ানো হয়।  ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাবাহী ৫ টি বড় জাহাজ গভীর সাগরে অবস্থানরত আছে। লাইটার জাহাজ গুলো জেটিতে ভিড়তে না পারলে কয়লা স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাবে।

 

 

এ বিষয়ে গন্ডামারা এস এস পাওয়ার প্লান্টের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর মশিউর রহমান বলেন, “জেটিঘাট এলাকাটি প্রকল্পের নিজস্ব জায়গা। বর্তমানে ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। জেলেদের নৌকা ভিড়তে দিলে কয়লাবাহী লাইটার জাহাজে বিঘ্ন ঘটে। তাছাড়া অনেক সময় জাহাজে চুরি-ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। প্রকল্পের নিরাপত্তা ও কাজের স্বার্থে ওই জেটিতে জাল বসানো বা নৌকা ভিড়ার অনুমতি নেই।”

 

 

এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামশেদুল আলম বলেন,  জেটিতে জেলেদের জাল বসানো ও বোট চলাচল নিয়ে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ড্রেজিং কাজে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আমাকে লিখিত ভাবে প্রজেক্টের পক্ষ থেকে অবিহিত করা হয়েছে।

 

 

উল্লেখ্যঃ গন্ডামারা এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট টি অরক্ষিত থাকার কারণে ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর মাসে একদল দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ২ জন নিরাপত্তা কর্মী খুন হয়েছে। উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোন দৃশ্যমান বিচার না হওয়ায় তারা পূর্বের মত প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে কয়লাবিদ্যুৎ সূত্র জানা যায়।

 

 

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.