কালভার্ট বন্ধ করে দোকান নির্মাণ, পানিবন্দি দুই গ্রামের হাজারো মানুষ, ভেঙে পড়েছে ২০টি মাটির দেওয়াল ঘর

 

বাঁশখালী চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ও শীলকূপ ইউনিয়নের পূর্ব শীলকূপ ও পূর্ব চাম্বল মিঠাই ফকির পাড়া এলাকার প্রায় হাজারো পরিবার জলাবদ্ধ অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। ২ শত বছরের পুরনো পানি নিষ্কাশনের একমাত্র
নালাটির উভয় পাশে (কালভার্টটির মুখ সংকুচিত) বন্ধ করে বিগত ৪ বছর পূর্ব থেকে আওয়ামী পেশিশক্তির রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে দোকান নির্মাণ করায় চার বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের। গত ৪ দিন ধরে পানি বন্দি হয়ে দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন তারা। ক্ষতি হচ্ছে মাছের ঘের, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন ফসলের।

 

ভুক্তভোগীরা জানান, ২০২০ সালে আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের ছত্রছায়ায়
শীলকূপ এলাকার প্রবাসী মোঃ ওসমান নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি টাইম বাজার দক্ষিণ পাশে পূর্ব শীলকূপ ও পূর্ব চাম্বল এলাকার ২ শত বছরের পুরনো পানি নিষ্কাশনের একমাত্র নালাটির উভয় পাশে (কালভার্টটির মুখ সংকুচিত) বন্ধ করে দোকান নির্মাণ করেন। এসময় ভুক্তভোগীরা বাধা দেন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেন। কিন্তু এর কোনও সমাধান হয়নি। ফলে ২০২২ সাল থেকে প্রতি বর্ষা মৌসুমে তারা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েন। বর্ষা শুরু হলেই তাদের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ, পুকুর, জলাশয় পানিতে টইটম্বুর হয়ে পড়ে। এ বছরও প্রবল বর্ষণে হাজারো পরিবার জলাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।

আজ সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে সরেজমিনে পরিদর্শন কালে পূর্ব চাম্বল মিঠাই ফকির পাড়া এলাকার মোঃ আবদুল জলিল, জাফর আহমদ, ও মৌলানা সিরাজুল হক জানান, জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরে-বাইরে পানিতে বন্দি হয়ে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছি। পাশের গ্রামে আত্মীয়স্বজনের বাসায় গরু-ছাগল রেখে এসেছি। অনেক দূরে অন্যের বাড়িতে গিয়ে একবেলা করে খাবার রান্না করে আনছি। আমরা খেয়ে আছি নাকি না খেয়ে আছি কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। বিগত ৪ বছর যাবৎ এভাবে বর্ষা মৌসুমে আমরা পানিবন্দি হয়ে আছি। একদিকে বাঁশখালী ইকোপার্কের পানি আরেকদিকে পাহাড়ি ঢলের পানি নালাটির কালভার্টের ২ পাশে অবৈধ ভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জোর পূর্বক দোকান নির্মাণ করায় পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশন না হওয়ায় ২ হাজারের ও অধিক জনগণ এই কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। ইতিমধ্যে ২১ টির মত মাটির ঘর ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের মধ্যে মোঃ হেলাল, জয়নাল জাকের, ইমাম হোসেন, ইউচুপ,আরিফ, জিয়াবুল, দেলোয়ার, জাহাঙ্গীর, মনির,মাহমুদুল ইসলাম, আবুল কাশেম, শফি,শাহেব মিয়া,নুরুল আলম, সিরাজুল হক, মোঃ ছগির, কোহিনুর আক্তার,মোঃ রফিক, বাবুল ও শামসুল হক।

ওই এলাকার মোঃ হেলাল ও মোঃ নোমান জানান, কালভার্ট দিয়ে পানি যেতে পারছে না একারণে পূর্ব শীলকূপ ও পূর্ব চাম্বল এলাকার মানুষ ডুবেছে। মাছের প্রজেক্ট, আমন ক্ষেত, বীজতলা, মিষ্টি আলু, মরিচ, লাউ, হলুদসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

পূর্ব চাম্বল ও পূর্ব শীলকূপ এলাকার মোঃ ইউছুফ ও মোঃ নজরুল জানান, আকস্মিক জলাবদ্ধতায় পাহাড়ি ঢলেভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার পুকুরে মাছ। তাদের ২ টি বড় পুকুরের প্রায় ৮-১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ ভেসে গেছে। মিঠাই ফকির পাড়া এলাকার আমির হোসেন জানান, তার পুকুরের প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকার মাছ ভেসে গেছে।

পূর্ব শীলকূপ গ্রামের মো. রাসেল ও মো. আলমগীর জানান, গত চার দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কেউ আমাদের কোনও খোঁজ খবর নেননি। বেআইনীভাবে কালভার্ট বন্ধ করে দোকান নির্মাণ করলেও স্থানীয় প্রশাসন গত তিন বছরেও এদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি এবং পানি নিষ্কাশনেরও কোনও ব্যবস্থা করেনি। ২০২২ সালে স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এবারও আমাদের পানিবন্দি হতে হয়েছে। আমরা টাকা-পয়সা ত্রাণ কোনোটাই চাই না। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা চাই।

চাম্বল এলাকার মো. ফারুক হোসাইন জানান, পানি নিষ্কাশনের জন্য সরকার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে দিয়েছে। কিন্তু কয়েকজন মানুষ কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দোকান নির্মাণ করায় পানির গতিপথ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয় অভিযুক্ত সৌদি প্রবাসী মোঃ ওসমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জেসমিন আক্তার জানান, আকস্মিক প্রবল বর্ষণে বাঁশখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পানি চলাচলের নালা- চড়ায় ও জলকর খাল অবৈধ ভাবে দখল কারে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় বাঁশখালীর বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পানি জমে থাকে। অবৈধ ভাবে এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনগন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.