মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
শীতের শুরুতে বাজারে আসতে শুরু
করেছে গোলাকার টমেটো, গায়ের রং লাল, কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের বহুপুষ্টিগুন সমৃদ্ধ সবজি টমেটো। যে কোন তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে অতুলনীয় টমেটোর বাংলা নাম “বিলেতি বেগুন”। ব্যবহারিক জীবনে গ্রাম্য এলাকায় বিলেতি বেগুন নামে চাইলে অধিকাংশ লোকই চিনবেনা। ইতিমধ্যে বাজারে সয়লাব চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকার টাটকা টমেটো। আগাম টমেটো চাষ যেন উপকূলীয় এলাকার ভাগ্য বদলের স্বপ্ন। বর্ষা শেষে শত প্রতিকূলতার বাধাকে অতিক্রম করে শীতের আগমনীতে বাজারজাত করে অতিরিক্ত দাম পাওয়ার আশায় আগাম টমেটো চাষ যেন এই উপকূলীয় এলাকার মানুষের লালিত স্বপ্ন। সারাদেশে এই আগাম টমেটোর কদরও রয়েছে বেশ। তবে ফলন ভাল না হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকরা। হারিয়ে ফেলে নিজেদের সর্বস্ব মূলধন। তারপরও অতি লাভের আশায় আগাম টমেটো চাষকে সাদরে বরণ করে নিচ্ছেন কৃষকরা। উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ টমেটো উৎপাদিত হয় পশ্চিমাঞ্চল তথা সাগর উপকুলীয় এলাকায়। এসব টমেটো আঞ্চলিক চাহিদা পুরন করে চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। প্রান্তিক চাষীরা ন্যায্য মুল্য পাওয়ায় অত্যন্ত খুশি। চাহিদা ও লাভ বিবেচনায় কৃষকেরা টমেটাে চাষের দিকে ঝুকছে।
সরেজমিনে উপজেলার সরল, গণ্ডামারা, কাথরিয়া, বাহারছড়া, শীলকূপ, পুইছুড়ি, চাম্বল, বৈলছড়ী ও খানখানাবাদ উপকূলীয় এলাকা সহ পাহাড়ী অঞ্চলজুড়ে টমেটো আর টমেটো ক্ষেত। গ্রামের প্রতিটি ধানক্ষেত এখন টমেটো ক্ষেতে রূপ নিয়েছে। চারদিকে প্লাস্টিকের কালো কাগজে মোড়ানো টমেটো ক্ষেতগুলোতে ঢুকে দেখা যায়। সারি সারি গাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলছে তোকা তোকা টমেটো। প্রতিটি গাছের মাঝখানে রয়েছে ২ ফিটের দুরত্ব। সব যেন এক সমান। প্রতিটি গাছ মাটি থেকে চার থেকে পাঁচ ফুট উঁচু। এই যেন চাষিদের হাতে বানানো এক কারুকাজ।
সেখানে ঘুরে আরও দেখা যায়, টমেটোর ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাষিরা তড়িঘড়ি করে ছিড়ছে টমেটো। হাল্কা সবুজ লাল রং আসলেই চাষীরা টমেটো ছিড়ে খাঁচায় খাঁচায় ভর্তি করে বাজারে নিয়ে আসছেন। বাজারে আনা মাত্রই অনায়াসে কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দাম পাওয়া যাবে। হালকা পঁচে যাওয়া বা দাগ হওয়া টমেটো গুলোও প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। তাছাড়া চাষীরা ক্ষেত থেকে টমেটো তুলার আগেই বিভিন্ন গাড়ী নিয়ে ভিড় জমিয়েছে পাইকারি ক্রেতারা। বাজারে টমেটোর ব্যাপক চাহিদা থাকায় দুর দুরন্ত থেকে ছুটে এসেছে পাইকারী ক্রেতারা । কোন রকম দর কষাকষি ছাড়া নগদ টাকা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে টমেটো। এমন চাহিদা থাকায় চাষিরাও বেশ খুশি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীর ৩০০ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। উপজেলার গন্ডামারা, চাম্বল, সরল, কাথারিয়া, বাহারছাড়াসহ উপকূলীয় বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রফিট আর্লি ও দুর্জয়সহ কয়েক জাতের টমেটো চাষ হয়। এই টমেটো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারেরা কিনে নিয়ে যান। বাংলাদেশে সাধারণত শীতকালে টমেটোর উৎপাদন হয়। আর্থিকভাবে তাঁরা লাভবান হওয়ায় চাষেও বাড়ছে আগ্রহ।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়নের টাইমবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি নতুন টমেটো খুচরা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চাষিদের পাইকারি ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি করতেও দেখা যায়।
গন্ডামারা হাদির পাড়া এলাকায় প্রায় ৪২ শতক জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন স্থানীয় কৃষক গিয়াস উদ্দিন । বর্তমানে তার ক্ষেতে লাল টমেটোর সাগর, দিনভর চলছে সংগ্রহ ও বাজারজাতের ব্যস্ততা।
চাষি গিয়াস উদ্দিন জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে তিনি টমেটো চাষ করেছেন। একদিন পরপরই তিনি ৩০ থেকে ৪০ ক্যারেট টমেটো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। এতে প্রতিদিনই ভালো দাম পাচ্ছেন তিনি। এই জমিতে ধান করলে তেমন লাভ হতো না, কিন্তু টমেটো চাষে এবার ভালো ফলন পেয়েছি। আশা করছি মৌসুম শেষে ভালো লাভ হবে, বলেন গিয়াস। বাজারের ব্যাপক চাহিদা ও অতিরিক্ত দাম পাওয়ায় আগামী বছর আরও কয়েক শতক জায়গায় টমেটো চাষ করবেন বলেও জানান তিনি।
গন্ডামারা ইউনিয়নের প্রান্তিক টমেটো চাষী শামসুল আলম, কামরুল ইসলাম , মোরশেদ, মোজাম্মেল হক ও সরল এলাকায় মোঃ হোসাইন এর সাথে কথা বলে জানা যায় , প্রতি কানি (৪০ শতক) টমেটো চাষ করতে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে টমেটো বিক্রি করে খরচের টাকা উঠে এসেছে। বাকী সময়ের বিক্রির টাকা লভ্যাংশ হিসেবে স্থিতি থাকবে।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র সরকার জানান, বাঁশখালীতে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে আরলি ও দূর্জয় জাতের টমেটো চাষ করা হয়েছে। বাজারে এই সবজির ব্যাপক চাহিদা ও অতিরিক্ত দাম ৮০-১০০ টাকা থাকার কারণে কৃষকরা আগাম টমেটো চাষে ঝুঁকছেন। এতে কৃষকরা বেশ লাভবানও হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষে থেকে নিয়মিত চাষিদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা, প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্য উন্নতমানের বীজ, সার ও কীটনাশক প্রদান করছেন বলেও জানান তিনি।