পটিয়ার ওসি নেজাম এক মাসের মাথায় প্রত্যাহার

পটিয়া প্রতিনিধি:

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর আল্টিমেটামের পর পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে নৌকার প্রার্থী স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ওসির দ্রুত বদলির অথবা প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেন।

এর আগে নৌকার প্রার্থী নির্বাচন কমিশন বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ ডিসেম্বর পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. জহিরুল ইসলাম পটিয়া থানার ওসির বদলি চেয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

গত ১২ ডিসেম্বর রাতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব (চলতি দায়িত্বে) মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৯ চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হকের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনের বদলি চেয়েছিলেন।

গত ৭ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে জমা দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে এমন দাবি জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।

অভিযোগে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি অনুভব, পর্যালোচনা, পর্যেবক্ষণ করে দেখেছি, আমার আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী মহান জাতীয় সংসদের হুইপ এবং বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য হুইপের ক্ষমতায় গত ১২ নভেম্বর নিজের অনুগত ওসি নেজাম উদ্দিনকে বদলি করে আনেন পটিয়া থানায়। এই ওসির নানা-শ্বশুর বাড়ি পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে এবং হুইপের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।

মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী তার অভিযোগ পত্রে আরো বলেন, আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে ওসি নেজাম উদ্দীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন। যাহা সত্ত্বেও আমি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করিনি। ইতোমধ্যে গত ৫ ডিসেম্বর হুইপ নির্বাচনী আচরণবিধি সংক্রান্ত বিষয়ে পটিয়া আদালতে স্বশরীরে হাজিরা দিতে আসার পথে পটিয়ার প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতির মাধ্যমে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। এমনকি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আশপাশেও লোকজন চলাচল করতে দেয়নি। হুইপ  আদালতে হাজিরা শেষে নিজের গ্রামের বাড়ি শোভনদণ্ডীর রশিদাবাদে গেলে ওসি নেজাম উদ্দিনও ছুটে যান । সেখানে হুইপের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন।

অন্যদিকে, পুলিশের ডিআইজি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পটিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন পটিয়া উপজেলারা শোভনদন্ডী ইউনিয়নের রশিদাবাদ এলাকার মো. আশিক। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর চাচাত ভাই। গত ১০ ডিসেম্বর রশিদাবাদ এলাকার মো.  আশিক পৃথক পৃথক ভাবে পুলিশের ডিআইজি ও ইসির কাছে নালিশ করেন।

এরপর চট্টগ্রাম জেলা ডিবি পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমানকে ওসি হিসেবে পদায়নের জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়৷ এটি কার্যকর না হওয়ায় পরবর্তীতে গত ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ হেডকোয়ার্টার দ্বিতীয় দফায়  রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই সার্কেল অফিসের জসীম উদ্দিনের নাম প্রস্তাব পাঠানো হলেও কার্যকর করেনি৷
এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে আল্টিমেটাম দেওয়ার পর ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমান ওসি (তদন্ত) মো. সোলায়মান অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে নৌকার প্রার্থী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তার অনুসারীদের ওসি নেজাম উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে হয়রানি করছেন। তফসিল ঘোষণার ৩/৪ দিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী অনুগত ওসি নেজামকে পটিয়া থানায় নিয়ে আসেন৷ পক্ষপাতিত্ব করার বিষয়টি বুঝতে পেরে ইসি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন নৌকার প্রার্থী।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.