নতুন সীমান্ত চুক্তির পর সেনা সরানো শুরু করেছে চীন ও ভারত। চার বছর আগে দুই দেশের সীমান্তে সেনাদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর এটিই সম্পর্কের বরফ গলার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। খবর রয়টার্সের।
লাদাখের দেপসাং, ডেমচক এলাকাসহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সেনা সরানোর ব্যাপারে কয়েক দিন আগেই দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সেই প্রক্রিয়াই এখন শুরু হয়েছে বলে শুক্রবার দুই দেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ভারত সরকারের একটি সূত্র জানায়, দুই দেশের মুখোমুখি অবস্থানে থাকা সেনাদের সরানো হচ্ছে। এ মুহূর্তে দেপসাং ও ডেমচক এলাকা থেকে সেনাদের সরানো হচ্ছে।
দেপসাং এবং ডেমচকের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শেষ করতে এক সপ্তাহের মতো লাগতে পারে। ফলে অক্টোবর মাসের শেষ হওয়ার আগেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা প্রত্যাহার (ডিসএনগেজমেন্ট) এবং সেনা সংখ্যা কমানোর (ডিসক্যালেশন) কাজ শেষ হবে। এর পর পরিস্থিতি ২০২০ সালের মে মাসের আগের অবস্থায় ফিরবে।
শুধু তা-ই নয়, এ চার বছর যেসব অস্থায়ী সেনা ছাউনি তৈরি হয়েছিল, তাও সরানো হবে। আগের মতোই দু’দেশের সেনা টহল দেবে সীমান্তে। কিন্তু টহলদারি সীমানা নিয়ে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়, নজর থাকবে সেদিকেও। টহলদারির নিয়ে দু’দেশই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানবে। এক দেশের সেনা টহলদারি শেষ হলে তারা অন্য দেশকে তা জানিয়ে দেবে। তার পরই শুরু হবে আরেক দেশের টহলদারি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান শুক্রবার বলেছেন, সম্প্রতি ভারত ও চীনের মধ্যে মতৈক্য হওয়া সমাধান অনুযায়ী, দুই দেশের সেনাবাহিনী তাদের সংশ্লিষ্ট কাজ বাস্তবায়ন করছে। এখন পর্যন্ত নির্বিঘ্নে অগ্রগতি হয়েছে।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার পশ্চিম দিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ‘বটলনেক’ অঞ্চলে টহলদারির ক্ষেত্রে ভারতকে আর বাধা দেবে না চীন। এই অঞ্চলটি ভারতের দাবি করা এলাকার ১৮ কিলোমিটার ভেতরে।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এলএসি পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চীনের সেনাদের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার মধ্যে ওই বছরের ১৫ জুন গালওয়ানে চীনা হামলায় নিহত হন অন্তত ২০ ভারতীয় সেনা। কয়েকজন চীনা সেনাও নিহত হয়েছিলেন। ওই সংঘর্ষের পর থেকেই কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে দফায় দফায় বৈঠক শুরু হয়।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে চুশুল-মলডো পয়েন্টে দুই সেনার কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকে এলএসির কিছু এলাকায় উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। তবে প্যাংগং হ্রদ লাগোয়া ফিঙ্গার এরিয়া, দেপসাং উপত্যকাসহ বিভিন্ন এলাকা নিয়ে সমস্যা অমীমাংসিতই ছিল। অবশেষে সেসব সমস্যার সমাধান হলো। আগামী ২৯ অক্টোবরের মধ্যেই ভারত ও চীন সেনা সরানোর কাজ শেষ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।