বোয়ালখালীতে পানির সংকট, নলকূপ থাকলেও নেই পানি

বোয়ালখালী প্রতিনিধি : বহুদূরে গিয়ে কোমড়ে কলসি নিয়ে পানি আনতে যাওয়ার দৃশ্য গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম দৃশ্য। উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ কোমড়ে কলসি নিয়ে পানি আনতে যাওয়ার দৃশ্য মুছে দিয়েছে বহু আগেই।

ঘরে ঘরে স্থাপিত হয়েছে নলকূপ, গভীর নলকূপ সহ উন্নত মানের পানি উত্তোলনের যন্ত্র। সবকিছু ব্যর্থ করে দিয়ে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে আবার দেখা যাচ্ছে সেই পুরোনো দিনের গ্রাম বাংলার দৃশ্যের প্রতিফলন। উন্নয়নশীল এই দেশে এমন দৃশ্যের বাস্তব রূপ মানতে পারছেন না অনেকেই, এটাই যেন স্বাভাবিক।

ঘরে নলকূপ থাকলেও সেই নলকূপে দেখা মিলছে না পানির। পুরো এলাকা জুড়ে দু-একটি টিউবওয়লে পানি পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু তাও খুব সামান্য। তাই বাধ্য হয়ে দূর থেকে অনেকের দরজায় ধরনা দিতে হচ্ছে যাদের নলকূপে সামান্য পানি পাওয়া যাচ্ছে তাদের দরজায়।

আবার কোন কোন পাড়া বা এলাকায় নলকূপের পানি পাওয়া দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে যার ধরুন অপারগ হয়ে দিঘি বা পুকুরের পানি শোধন করে পান করছেন অনেকেই।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত জেলা উপজেলায় পানির সংকট থাকলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই বোয়ালখালী উপজেলার পানি সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে এই প্রথম। হঠাৎ এই পানি সংকটের ব্যাপারে অপরিকল্পিতভাবে সদ্য গড়ে উঠা বিভিন্ন ফ্যাক্টরির পানি উত্তোলন করাকে দায়ী করেছেন বোয়ালখালীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক সহ বহু জনসাধারণ।

বোয়ালখালী উপজেলার আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুশ শুক্কুর, অভাবের কারণে তার ঘরে টিউবওয়েল না থাকলেও একমাত্র ভরসা সরকারী টিউবওয়েল। তবে সেই টিউবওয়েল বারবার মেরামত করা হলেও বেশিদিন ঠিকতে পারেনা এই মেরামতের সুফল। একি এলাকায় রয়েছে মাত্র দুইটি টিউবওয়েল, যার সব কয়টিতেই অপরিবর্তনীয় অবস্থা। যার কারণে নিরুপায় হয়ে দিঘীর জল থেকে পানি পান করছে আব্দুশ শুক্কুরের পরিবার সহ গ্রামবাসীরা ।

স্থানীয় সাংবাদিক এমরান কাদেরী বলেন, বোয়ালখালীতে এর আগে পানি সংকট ছিল না। ইতোমধ্যে পোপাদিয়া সহ কয়েকটি জায়গায় কিছু প্রতিষ্ঠান অপরিকল্পিতভাবে সরকারের অনুমোদনবিহীন গভীর নলকূপ দিয়ে পানি তোলার কারণে এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বোয়ালখালীবাসী। এই সংকট মোকাবেলায় স্থানীয় সাংসদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা বোয়ালখালী শাখার সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, পোপাদিয়া রিকু ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে যে পানি বিক্রির জন্য যে প্রতিষ্ঠান হয়েছে তার কারণে আমুচিয়া, পোপাদিয়া, আহলা কড়লডেঙ্গা, শ্রীপুর-খরণদ্বীপ, সারোয়াতলী তথা বোয়ালখালীর পূর্বাঞ্চলে অনেক টিউবওয়েল পানি উঠছে না। এই সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

যেখানে পানি কম পাওয়া যাচ্ছে সেখানে গভীর নলকূপ স্থাপন করে তা সমাধান করার চেষ্টা চলছে বলে জানান আহলা কড়লডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুল হক মান্নান।

অন্যদিকে পানি সংকটের কারণ হিসেবে পোপাদিয়ায় সদ্য গড়ে ওঠা একটি পানির ফ্যাক্টরিকে দায়ী করেন আমুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল দে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.