সোমবার (১৫ নভেম্বর) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্যা ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ প্রবর্তন করায় এর উপর আনীত প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়ার আগে কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী ১৪৭ এর ধারা অনুযায়ী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এই প্রস্তাব আনেন। প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা।
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অবদান অল্প সময়ে বলে শেষ করা যাবে না। আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহতদের স্মরণ করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে জাতির পিতা একটি অনুন্নত বাংলাদেশকে স্বল্প উন্নত দেশে উন্নীত করেন। আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ বাংলাদেশ লাভ করে। পৃথিবীর কোনো দেশ স্বাধীনতার পর এত অল্প সময়ে এত স্বীকৃতি আদায় করতে পারেনি, যেটি বাংলাদেশ পেরেছিল একটি কারণে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আমাদের ছিল বলেই সেটা সম্ভব হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য। এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক মুক্তির জন্য, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য, স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি যখন অর্থনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা দিলেন, দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা দিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হলো তাকে। এই হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে না। আমাদের পরিবার এবং আমাদের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকেও।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওদের মনে হয় একটিই চিন্তা ছিল। জাতির পিতাকে পরিবারসহ হত্যা করলে বাংলাদেশ যে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিল, বিজায়ী জাতি হিসেবে মাথা তুলে বিশ্ব দরবারে চলছে, সেই জায়গাটাকে নষ্ট করা। স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলাদেশ ঘরে না পৌঁছায়, স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ হয়, ওই বিজয় যেন ব্যর্থ হয়, এটিই বোধহয় প্রচেষ্টা ছিল খুনি চক্রের। যেটি আমরা দেখেছি একুশটা বছর। সেইভাবেই দেশ পরিচালনা করা হয়েছে। নইলে বাংলাদেশের মানুষের যে উন্নয়ন করা যায় সেটি আজকে আমরা প্রমাণ করেছি প্রমাণ করতে পেরেছি।’
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের চার মৌলিক নীতি, পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথাগুলো জাতির পিতা বলেছেন। বাংলার ভূমিহীন মানুষদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়াা, চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার ব্যবস্থা করা, শিক্ষাকে অবৈতনিক করা এগুলো তিনি করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ। কোনো কারেন্সি নোট নেই, এই অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করে প্রায় দেড় লক্ষাধিক সরকারি চাকরি দেওয়া, এমনকি যেসব পত্রপত্রিকায আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যেগুলো তারা চালাতে পারছিল না। সেই সাংবাদিকদের পর্যন্ত সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়েছে তিনি। মা যেমন সন্তানকে সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে, ঠিক সেইভাবে প্রতিটি পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত কারখানাকে অথবা ফেলে দেওয়া বা বন্ধ করে দেওয়া কল কারখানা সবগুলোকে তিনি জাতীয়করণ করে চালু করেন। যে সমস্ত মালিক তাদের জন্য বেসরকারিখাত আস্তে আস্তে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন এবং আমাদের সংবিধানের অর্থনীতির নীতিমালায় সেটা বলাই রয়ে এবং সেই সঙ্গে সেই যুগেই তিনি চিন্তা করেছিলেন আমাদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। আমাদের ফসল দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়াতে হবে। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। তিনি সবসময় বলতেন ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যেন আত্মমর্যাদার সঙ্গে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে পঁচাত্তরের পর আমরা তাই করতে দেখেছি। দেখেছি হাজার হাজার সামরিক বাহিনীর অফিসার ও সৈনিক বিমান বাহিনীর অফিসার এবং সৈনিক, সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছে নির্যাতন চলছে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে দেখেছি বিজ্ঞান কেউ পড়ে না। বিজ্ঞানের ক্লাস হয় না। বিজ্ঞানের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। গবেষণা তো ছিলই না। এর জন্য বিশেষ বরাদ্দ ছিল না। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পিছিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু এখন আর পিছিয়ে নেই। আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ জনগণকে। আমাদের তারা বারবার ভোট দিয়েছেন। সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। এই এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের পরিবর্তন আছে সারাবিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে এখন আর বাংলাদেশের কাউকে বাইরে গিয়ে কথা শুনতে হয়না। ভালো কাজটা কেউ না চোখে না দেখলে আমাদের কিছু বলার নেই।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘আমরা ইয়াং বাংলা স্টার্টআপ শুরু করেছি এবং এর জন্য কিছু বরাদ্দ দিয়েছে। আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক সহ আমাদের কিছু ইয়াং সংসদ সদস্য সকলেই কিন্তু এই প্রোগ্রাম নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস একদিনে তো হয় না ধাপে ধাপে করতে হয়।’