আনোয়ারা প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ-বাঁশখালী সেতুতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইজারাদারের চাহিদা মতো টোল না দিলে মারধর ও লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। গত বুধবার (১৮ মার্চ) অতিরিক্ত টোল আদায়কে কেন্দ্র করে বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁনপুর এলাকার মো. শফিউল আলম নামের এক মোটর সাইকেল চালককে মারধর করে লাঞ্চিত করার অভিযোগের ঘটনাও ঘটে। এঘটনায় বৃহস্পতিবার বাঁশখালী থানায় মো. শফিউল আলম টোল আদায়ে দায়িত্বে থাকা মো. জাহাঙ্গীর (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগও করেন। স্থানীয় ও গাড়ির চালকদের অভিযোগ, এসব ঘটনা প্রতিদিনের হলেও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সেতুর ইজারাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। তবে সেতুর সাব-ইজারাদার আবদুর রাজ্জাক সরকার নির্ধারিত টোল ছাড়া অতিরিক্ত কোন টাকা আদায় করা হয়না বলে জানান। দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তৈরারদ্বীপ সেতুর ইজারা দেওয়ার পর সরকার নির্ধারিত টোলের তালিকা ইজারাদারকে দেওয়া হয়। তালিকা অনুযায়ী ট্রেইলার গাড়ী ৩০০ টাকা, হেভী ট্রাক ১৮০, মিডিয়াম ট্রাক ১৫০, মিনি ট্রাক ১১৫, বড় বাস ৩০, কৃষি কাজে ব্যবহৃত যান ৯০, মিনি বাস ১৫, মাইক্রোবাস ৬০, সিডান কার ৪০, মোটর সাইকেল ১০ ও রিক্সা-ভ্যান ৫ টাকা নির্ধাণর করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শনিবার (২০ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় ও বিভিন্ন গাড়ী চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হেভী ট্রাকের টোল সাদা টোকেন ১৮০ টাকা নির্ধারন থাকলেও ফরহাদ ট্রেডিং ইজারাদা নামে টোকেনের মাধ্যমে ট্রাক-ট্রেইলার সাদা টোকেনে ৩০০ টাকা আদায় করছে। এসময় মোহাম্মদ সেলিম নামে এক ড্রাইভারের কাছ থেকে নেওয়া টোকেনে দেখা যায়, প্রতিবার গাড়ী পারাপারের জন্য শুল্কের হার (খালী অথবা বোঝাই অবস্থায়) একই হারে টাকা দিতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয় এ টোকেনে। এসময় ট্রাক চালক মোহাম্মদ সেলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে সব ডাকাত, আমার মিডিয়াম ট্রাক ১৫০ টাকা টোল দেওয়ার কথা থাকলেও আদায় করছে ৩০০ টাকা। না দিলে ট্রাক আটকে রেখে মারধর করে। এসময় তিনি প্রতিবেদককে ৩০০ টাকার একটি সাদা টোকেনও দেখান। গাড়ী চালক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, সড়ক ও জনপদ বিভাগের তৈলারদ্বীপ সেতুর টোল আদায়ের নির্ধারিত তালিকা টোল বক্সের পাশে টাঙ্গানো হলেও ইজারাদার নিজের নির্ধারিত টোকেন করে জোরপূর্বক টোল আদায় করছে। অতিরিক্ত টোল দিতে কোন চালক অস্বীকার করলে ইজারাদারের লোকজনের হাতে লাঞ্চিত হতে হয়। গত বৃহস্পতিবার একটি মোটরসাইকেল থেকে ১০ টাকার স্থলে ২০ টাকা আদায় করার প্রতিবাদ করলে সে চালককে মারধর করে ইজারাদারের লোকজন। পরে লাঞ্চনার শিকার মোটর সাইকেল চালক বাঁশখালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। লাঞ্চনার স্বীকার অভিযোগকারী মোটর সাইকেল চালক মো. শফিউল আলম জানান, মোটর সাইকেল নিয়ে সেতুপার হয়ে টোল বক্সে আমি ৫০ টাকার নোট দিলে তারা আমাকে ৩০ টাকা ফেরত দেন। আমি ইজারাদারের নির্ধারিত তালিকা মতে ১০ টাকার স্থলে ২০ টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইজারাদারের লোকজন আমাকে লাঞ্চিত করে। পরে আমি থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করি। স্থানীয় বারখাইন তৈলারদ্বীপ এলাকার ইউপি সদস্য আজিজুল হক আজিজ জানান, তৈলারদ্বীপ সেতুতে সরকার নির্ধারিত টোলের দ্বিগুন আদায় করছে ইজারাদারের লোকজন। প্রতিদিনই চালকদের সাথে মারামারি ঘটনাও ঘটে। ইজারাদারের লোকজনের হাতে প্রায়শ মারধরের শিকার হয় গাড়ী চালকেরা। তৈলারদ্বীপ সেতুর সাব-ইজারাদার আবদুর রাজ্জাক অতিরিক্ত টোল আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, সাড়ে ২৫ কোটি টাকায় ইজারা নেওয়া সেতুতে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া কোন অতিরিক্ত টোল আদায় করা হয়না। দ্বি-গুন টোল আদায়ের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, কিছু সন্ত্রাসী আমার কাছে চাঁদা চাইলে না দেয়ায় এ অভিযোগ করেছে। অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না।