পদুয়া বন চেকপোস্টে অবৈধরা পার হলেও, বৈধরা আটকে যায়

বিশেষ প্রতিনিধি (মোঃ আলমগীর) 
“স্টেশন কর্মকর্তার যোগসাজশে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি”
চট্টগ্রাম মহাসড়কের পদুয়া এলাকার চেকপোস্টে তল্লাশির নামে কাঠবাহী যানচালক ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
এই চেকপোস্টে দিয়ে অবৈধভাবে কাঠ বহনকারী যানবাহনগুলো মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে বুক ফুলিয়ে পার হলেও বৈধরা চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে।
বন বিভাগের এ চেকপোস্টে কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে অনেকজন থাকলেও তারা কাঠবাহী গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি করতে কিছু বহিরাগত বখাটে নিয়োগ করেছেন। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন চালক ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বনের গাছপালা অথবা কাঠ পাচার রোধে চট্টগ্রাম দক্ষিণ
বন বিভাগের অধীনে পদুয়া রেঞ্জ এলাকায় বন বিট কাম চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়।
প্রতিটি কাঠবাহী যানবাহনকে এখানে ডেটা এন্ট্রি করে কাঠ বহনের ট্রানজিট পাশ (টিপি) দেখিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নিতে হয়।
এ চেকপোস্টের মাধ্যমে চোরাই পথে কাঠ পাচার বন্ধ হবে এবং রাজস্ব প্রদান করে বৈধভাবে আসা কাঠ বহনকারীরা সহযোগিতা পাবে। কিন্তু চেকপোস্টে চলছে উল্টো নিয়ম।
চালকদের অভিযোগ, রাজস্ব প্রদান করে ট্রানজিট পাশ থাকলেও এ চেকপোস্টে কাঠবাহী সব যানবাহন জব্দ করা হয়। বখাটে চক্রের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করা হয় নানা অজুহাতে। যেসব যানবাহন চাহিদা মতো চাঁদা দিতে রাজি হয় না, তাদের মাল আনলোড করে চেক করার হুমকি দেওয়া হয়। তাছাড়া জোর করে আটকে রাখা হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ ধরনের হয়রানি থেকে বাঁচতে বৈধভাবে কাঠ বহন করা প্রতিটি যানবাহন বাধ্য হয়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে চাঁদা দিচ্ছেন। এছাড়া কাগজে ছোটখাটো ত্রুটি পেলে ইচ্ছামতো ঘুস আদায় করা হয়। প্রতিদিন শত শত কাঠবাহী যানবাহন থেকে এমনিভাবে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
গোপন সূত্রে জানা যায়, স্টেশন কর্মকর্তা সহ কর্মরত স্টাফদের সঙ্গে রয়েছে কাঠ সিন্ডিকেটের যোগসাজশ।
বন বিটগুলোর স্টেশনে কর্মরতদের ঘুস দিয়ে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ অবৈধ কাঠ পাচার করে নিচ্ছে এ সিন্ডিকেট। কাভার্ডভ্যানের মাধ্যমে প্রতিদিনই দেদার চোরাই কাঠ পাচার হচ্ছে। এতে রাজস্ব প্রদানকারী ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
আকাশমণি, জারুল, জাম সেগুন, চাপালিশ, গামারি, কড়ই, গর্জন সহ নানা প্রজাতির গাছ দিনভর কাটে রাতভর সড়ক পথে পাচারের মহোৎসব চলে। রাত যতই গভীর হয় ততই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে এসব কাঠ পাচার।
লামা থেকে আসা ঢাকাগামী গাছবাহী ট্রাকচালক রফিক মিয়া বলেন, রাজস্ব দিয়ে ট্রানজিট পাশ নিয়ে এলেও পদুয়া চেকপোস্টে উল্টা-পাল্টা কথা বলে আমার গাড়ি সাইড করে রাখে। পরে দালালদের মাধ্যমে তিন হাজার টাকা দেওয়ার পর ক্লিয়ারেন্স দেয়।
আজিজ নগর থেকে আসা অপর ট্রাকচালক আব্দুল কাদির বলেন, মাল এবং কাগজপত্র ঠিক থাকলেও চা-পানির জন্য তাদের দুই হাজার টাকা দিতে হয়। আমরা নিরুপায় হয়ে তাদের চাঁদা দিই।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো:দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমি এখন মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি” বলেই ফোন কেটে দেন।
পদুয়া বন বিট কাম চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সংযোগ না পাওয়ার কারণে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয় নিয়ে পদুয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মঞ্জুর  মোরশেদের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি জানিনা, যদি টাকা নিয়ে থাকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.