আ ন ম সেলিম,পটিয়া(চট্টগ্রাম) :
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় সম্প্রতি ঘন ঘন অপহরণের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে উপজেলার কেলিশহর,হাইদগাঁও, কচুয়াই ও খরনা ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলের
পাহাড়ে বসবাসকারী অথবা বিভিন্ন কাজে যাতায়াত করা মানুষজন ভয় ও শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কিছু অপরাধী চক্র পাহাড়ি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। তারা সুযোগ পেলেই পথচারী, শ্রমিক কিংবা পাহাড়ে কাজ করতে যাওয়া লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে। বেশ কয়েকটি ঘটনায় ভুক্তভোগীদের মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাত তো দূরের কথা,এখন দিনের বেলাতেও একা চলাফেরা করতে ভয় লাগে। অনেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত ১৮ নভেম্বর উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের ধামাইছড়ি পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্রের মুখে সৈয়দুল আমিন (২২) নামে এক রাখালকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপন না পাওয়ায় তাকে মারধর করে ৮টি গরু লুট করেছে সন্ত্রাসীরা। এর কিছুদিন আগেও কেলিশহর ইউনিয়নের ৩ জন কৃষককে পাহাড়ে অপহরণ করে মারধর করার পর মুক্তিপনের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পরপর এভাবে পাহাড়ে অপহরণে ঘটনা ঘটে। বছর খানেক আগে খরনা ইউনিয়নের ফকির পাড়া এলাকার কৃষক আনু মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, পাহাড়ি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বাড়তি টহল ও প্রযুক্তিভিত্তিক নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।
এ ঘটনার পর সাধারণ মানুষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে পাহাড়ি এলাকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হবে।
স্থানীয়রা বলছেন,কিছুদিন বন্ধ থাকার পর পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম সাম্প্রতিক সময়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মুক্তিপণের জন্য কৃষকদের ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা বাড়তে থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
লুট হওয়া গরুর মালিক কেলিশহর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রবিউল হোসেন কফিল বলেন, ৮ থেকে ১০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আমার রাখালের তত্ত্বাবধানে থাকা ৮টি গরু লুট করে নেয়। পরে তাকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে গরুগুলো নিয়ে গহীন পাহাড়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে, ঘটনাগুলো তদন্তে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে অভিযান শুরু করেছে বলে জানা গেছে। পটিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছে, অপহরণ চক্র শনাক্তে কাজ চলছে এবং অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানুর রহমান জানান,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।