খাতুনগঞ্জে এক রাতেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ালো ৮শ টাকা

ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণার পর এক রাতের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি তেলে ৮শ টাকা বেড়েছে। ফলে পাইকারিতে এখন লিটারপ্রতি খোলা তেল ১৯৭ টাকা ও পামতেল ১৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। তেলের দাম হঠাৎ বাড়ায় দোকানে তেলের সরবরাহও কমে গেছে বলে জানালেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে কয়েকদিন আগেও প্রতিমণ সয়াবিন তেল (৩৭ দশমিক ৩২) সাড়ে ৬ হাজার টাকায় ও পামতেল মণপ্রতি ৫ হাজার ৮শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অথচ আজ ৮শ টাকা বেড়ে প্রতিমণ খোলা সয়াবিন তেল ৭ হাজার ৩শ ও পামতেল ৬ হাজার ৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে পাইকারিতে এতদিন লিটারপ্রতি ১৭৫ টাকায় বিক্রি হওয়া খোলা সয়াবিন তেল আজ ১৯৭ টাকা ও ১৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া পামতেল ১৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ পাইকারিতেই লিটারপ্রতি খোলা তেলে ২২ টাকা ও পামতেলে ২১ টাকা বেড়েছে। সে হিসেবে খুচরা বাজারে আজ ভোজ্যতেলের লিটার ২শ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

গত ১৭ মার্চ খুচরা বাজারে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০, পামতেল ১৩৬ ও পাঁচ লিটার তেল ৭৬০ টাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। অথচ বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমসহ ব্যবসায়ীদের নানা অজুহাতে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এতে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন সাধারণ ভোক্তারা। তার ওপর ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণার পর নতুন করে আরেক দফা ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন পাইকাররা। শুধু তাই নয়, দাম বেড়ে যাবার কারণে ও ঈদকে সামনে রেখে পাইকাররা তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন– এমন অভিযোগ তুলছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, বিশ্বের শীর্ষ পামতেল উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া গত ২৩ এপ্রিল পাম তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা দেয়। সিদ্ধান্তটি আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু এরইমধ্যে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ইন্দোনেশিয়ার সিদ্ধান্তের প্রভাবে খাতুনগঞ্জেও মণপ্রতি খোলা তেল ও পামতেলে ৭শ থেকে ৮শ টাকা বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানালেন, ইন্দোনেশিয়ার তেল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে আমাদের দেশসহ সারাবিশ্বে ভোজ্যতেলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তার ওপর আমদানির পরিমাণও কমে গেছে। তাই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।

খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ এনাম হোসেন সিভয়েসকে বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা তো আমাদের হাতে নেই। এটা মিল মালিক বা আমদানিকারকরা ভালো বলতে পারবেন। তবে এইটুকুই বলতে পারি তেলের সরবরাহ কমে যাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি জাহাজ ভাড়ার প্রভাব তার ওপর নতুন করে ইন্দোনেশিয়ার তেল রপ্তানির বন্ধের সিদ্ধান্তে তেলের দাম বেড়েছে। মিল মালিক বা আমদানিকারকরা সরবরাহ বাড়ালে দাম কিছুটা হলেও কমতে পারে।

ঈদগাঁ কাচাবাজারের ব্যবসায়ী মো. নেজাম বলেন, আজিয়া ১৯৬ টিঁয়্যা দিয়্যেরে পাইকারেত্তুন তেল কিনি আইন্নি। আঁরার গাড়ি ভাড়া, লেবার খরচ আছে। বেক্কিন মিলাইয়্যেরে ২শ টিয়্যার উঁরে তেল ন বেচিলে লস দন ফরিবু। আঁরা বাড়তি টিয়্যা দি কিনি আনিলে বাড়তি দামত বেচন ফরে। ইয়ানে আঁরার কিছু গরিবার নাই। (আজ প্রতিলিটার তেল ১৯৬ টাকা করে পাইকারের কাছ থেকে কিনে এনেছি। গাড়ি ভাড়া, মজুরি খরচ আছে। সবমিলিয়ে ২শ টাকা লিটারে তেল বিক্রি না করলে লোকসান হবে। আমরা বাড়তি দরে তেল কিনে আনলে বাড়তি দরে বিক্রি করতে হয়। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।

ইয়াসির রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, দফায় দফায় ভোজ্যতেলে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত খুঁজেন তেলের দাম বাড়ানোর জন্য। দীর্ঘদিন ধরে তেল নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণেই তেলের বাজারের আজ এ অবস্থা। একে তো রোজার মাসে তেল বেশি লাগে, তার উপর ঈদ আসছে। এরা মনে হয় আমাদের আর বাঁচতে দেবে না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক মো. আনিছুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছি না। প্রতিদিন আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলেই আমরা শাস্তির আওতায় আনছি। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সবসময় বাজার অস্থির করে তোলার চেষ্টায় থাকেন। আমরা বিষয়টি আবারো খতিয়ে দেখবো। অকারণে তেলের দাম বাড়ালে কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।

কনজ্যুমার এসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রামের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, উছিলা ধরে ধরে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারাটা আমাদের দেশে একটা নিয়ম বা রীতিতে পরিণত হয়েছে। উছিলা পেলাম, দাম বাড়াবো—এই মেথডে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশে রোজার সময় দাম কমিয়ে মানুষকে সহযোগিতা করে ব্যবসায়ীরা। আর আমাদের দেশে তার উল্টো চিত্র। আমরা ভোজ্যতেল নিয়ে বারংবার বলেছি। এটা নিয়ে আর নতুন কিছু বলার নেই। একটা দেশ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে না নিতেই সেটাকে পুঁজি করে তেলের দাম বাড়িয়ে দিলাম—এমনটা তো হতে পারে না। তাই প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলো বিষয়টি খতিয়ে দেখলে মানুষ উপকৃত হবে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.