চট্টগ্রাম আদালতে পিপি নিয়োগে নানা অনিয়ম

চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নিয়োগে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, ঘোষণার তিন দিন পর সংশোধন করে পুনরায় চিঠি এবং নবীনদের কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করায় আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি মৃত এক ব্যক্তিকে প্যানেল আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় বিব্রত হয়েছেন কেউ কেউ। যদিও আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, সম্পূর্ণ নিয়োগই মন্ত্রী এবং সচিবের নির্দেশনায় করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে পিপি, জিপি ও প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেয়। আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে সলিসিটর অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবদুছ ছালাম মণ্ডল স্বাক্ষরিত নিয়োগ সংক্রান্ত চিঠিটি চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে পাঠানো হয়।

এতে জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালত, নারী শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর, অতিরিক্ত পিপি, সহকারী পিপি, অতিরিক্ত জিপি, সহকারী জিপি এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে দুজন প্যানেল আইনজীবীসহ প্রায় ১৭৭ আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সিনিয়র আইনজীবী এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুপারিশে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠানো নিয়োগ সংক্রান্ত ওই চিঠিতে অ্যাডভোকেট কানু রাম শর্মা এবং শেখ অহিদুল নবীকে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের প্যানেল আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়োগ পাওয়া শেখ অহিদুল নবী ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। ২০২১ সালে মে মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন তার ভাই মোহাম্মদুন্নবী শিমুল। তিনিও এবার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদুন্নবী শিমুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই শেখ অহিদুল নবী মারা গেছেন। তালিকাগুলো এখান থেকে যে সময় পাঠানো হয়েছিল ওই সময় আমার ভাই জীবিত ছিলেন। আইন মন্ত্রণালয় হয়ত বিষয়টি খেয়াল করতে পারেনি।

এদিকে, গত ১৮ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে চট্টগ্রাম নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এ মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ চৌধুরী এবং  ট্রাইব্যুনাল-৬ এ এস এইচ মো. হাবিবুর রহমান আজাদকে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এর তিন দিন পর ২১ ডিসেম্বর আরেকটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে এস এইচ মো. হাবিবুর রহমান আজাদকে ট্রাইব্যুনাল-৫ এ এবং নজরুল ইসলাম সেন্টুকে ট্রাইব্যুনাল-৬ বিশেষ পিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া। যদিও ওই চিঠিতে ১৮ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল- ৫ এ নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ চৌধুরীর নিয়োগ বাতিলের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

জানতে চাইলে জেলা পিপি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এখনো অফিসিয়ালি চিঠি হাতে পাইনি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নিয়োগের বিষয়ে দুবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। শেষের চিঠিতে এস এইচ মো. হাবিবুর রহমান আজাদকে ট্রাইব্যুনাল-৬ এর নিয়োগ বাতিল করে ট্রাইব্যুনাল-৫ দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল-৬ এ নতুন করে একজন পিপি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-৫ এ আগে নিয়োগ দেওয়া মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ চৌধুরীকে যেহেতু বাদ দেওয়া হয়নি, সেহেতু ওই কোর্টে দুজনই থাকতে পারেন।

এক ট্রাইব্যুনালে দুজন বিশেষ পিপি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতীতে আমি কোনো সময় ট্রাইব্যুনালে দুজন পিপি নিয়োগ দিতে দেখিনি। তবে দুজন থাকলে আইনগত কোনো বাধা নেই।

এসব বিষয় ছাড়া ১৮ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক অতিরিক্ত পিপি ও সহকারী পিপি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন এবং নবীনদের মধ্য থেকে কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করায় আইনজীবীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ ও ২০১২ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত অনেককেই সহকারী পিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আবার ২০১৩ সালে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কাউকে অতিরিক্ত পিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরকম জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়ায় আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। আবার ২০১৮ সালে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় ওই ব্যাচের অনেকেই ক্ষোভ জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্প্রতি নিয়োগে নবীন এবং প্রবীণদের মধ্যে সমন্বয় করা হয়নি। ২০১৮ সালে সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাছাড়া নিয়োগ তালিকা সংশোধন, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। মৃত আইনজীবীর নাম তালিকায় আসার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এতে নানা অনিয়ম হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবদুছ ছালাম মণ্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, মৃত আইনজীবী নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি আমি অবহিত নয়। মন্ত্রী ও সচিবের নির্দেশনা, সংসদ সদস্যদের সুপারিশসহ নানা প্রক্রিয়ায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সংশোধন করে একটি প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। ওইখানে একটি ট্রাইব্যুনালে দুজন বিশেষ পিপিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট
মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.