পাহাড় কাটা নিয়ে চসিকের বিরুদ্ধে ডিসির অভিযোগই সত্য!

ইচ্ছেমতো পাহাড় কাটছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এক্ষেত্রে তারা অনেক সময় সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অনুমতিই নেন না। গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৬তম সভায় এমন অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান। নগরের বৃহত্তম দুটি সংস্থার বিষয়ে তার বিস্ফোরক এ মন্তব্য নিয়ে চট্টগ্রামে নানা মহলে আলোচনা হয়।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) আকবর শাহ থানা এলাকায় চসিকের উদ্যোগে পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর সময় ধসে এক শ্রমিকের মৃত্যু হলে আবারও বিষয়টি সামনে আসে।

 

dhakapost

সেদিন ডিসি ফখরুজ্জামান বলেছিলেন, চসিক রাস্তা করবে ভালো কথা কিন্তু পাহাড় কাটার পারমিশন তো তারা নিতে পারে। কাউন্সিলররা সিটি কর্পোরেশন থেকে একটি কাগজ নিয়ে ইচ্ছেমতো পাহাড় কাটছে। অনেকগুলো পাহাড় কিন্তু তারা নষ্ট করে দিয়েছেন। গত তিন মাসে আমরা অনেকগুলো অভিযান পরিচালনা করেছি। অনেক সময় দেখা গেছে, রাতের বেলা পাহাড় কাটা হয়। একইভাবে সিডিএ নিজেরা অনুমোদন দিয়ে বিভিন্ন পাহাড় কাটে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে আকবর শাহ থানার বেলতলীঘোনা এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কেটে রাস্তা বানাচ্ছে চসিক। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সেখানে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক। ওই সময় মো. শাহজাহান নামে একজনকে এক্সকেভেটরসহ হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে তাকে পাহাড় কাটার দায়ে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এ ঘটনার পরও টনক নড়েনি চসিকের। পাহাড় কাটা অব্যাহত রাখে চসিক।

dhakapost

সবশেষ শুক্রবার সন্ধ্যায় আকবর শাহ থানা এলাকায় পাহাড় ধসে খোকা (৪৫) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়। একই ঘটনায় আরও তিন শ্রমিক আহত হয়। দুর্ঘটনার পর সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান শুক্রবার রাতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঠিক ওই স্থানে ১১ ফেব্রুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাহাড় কাটা বন্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন। হাতেনাতে একজনকে আটক করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে আমরা জানতে পেরেছি স্থানীয় কাউন্সিলর সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমতি নিয়ে কাজটা করছেন। কাগজটা আমরা যাচাই করে দেখতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে আমি মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। পাহাড় কেটে যদি রাস্তা করতেই হয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হবে। এগুলো না মেনে যদি পাহাড় কাটে দুর্ঘটনা তো হবেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা দুর্ঘটনার কারণ এবং এটা কীভাবে প্রতিকার করা যায় সেটি খতিয়ে দেখবে। প্রতিবেদন পেলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব। তদন্তে কারও গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরকম ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আমরা অভিযানে নামব।

dhakapost

পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণে বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন রাস্তা নির্মাণ করছে। মারা গেছে ঠিকাদারের লোক। কেউ আসলে পাহাড় কাটেনি। গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছিল। এটি নির্মাণের জন্য মাটি এনে জমা রাখা হয়েছিল। বৃষ্টি হওয়ায় মাটিগুলো নরম হয়ে গেছে। এগুলো ধসে পড়ে দুর্ঘটনা হয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন অভিযানে এসেছিল। তাদের নির্দেশেই গাইড ওয়াল করা হচ্ছে। আমাদের রাস্তা কিন্তু ৪০ ফুট। মাত্র ১০ ফুট রাস্তা রেখে গাইড ওয়াল করে দিচ্ছি। মেয়র মহোদয়ও বলেছেন গাইড ওয়াল করে দাও। আমরা রাস্তার কাজ বাকি রেখে গাইড ওয়াল করে দিচ্ছি।

চসিকের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ বেশ পুরোনো। গত ২৫ জানুয়ারি উত্তর পাহাড়তলী সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিদর্শন করতে গেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় আকবর শাহ থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন বেলার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.