দূর্নীতির পাহাড়ে একাই রাজা পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা উচ্চ  বিদ্যালয়ের হেডমাস্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক 
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দীর্ঘ ১যুগেরও বেশী একই বিদ্যালয়ে থেকেই দূর্নীতির বরপুত্র হওয়ার ব্যাপক অভিযোগ ওঠেছে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানের বিরুদ্ধে।

 

 

সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলেছেন খোদ একই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের একাধিক অভিভাবকরা।

 

প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের বরাত দিয়ে গত ১২বছরের একটি হিসাবের কপি হাতে আসে প্রতিবেদকের, সেই কপির আলোকে অনুসন্ধানে মাঠে নামে প্রতিবেদক।

 

 

 

এক পর্যায়ে স্কুলের বর্তমান কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের সাক্ষাৎ এ স্কুলে গেলে স্কুলের একটি অভিভাবক সভা চলাকালীন শেষে সাক্ষাৎ হয় সাতকানিয়া উপজেলার সেই আলোচিত  সমালোচিত প্রধান শিক্ষক আবু হানিফের সাথে।
একটি নথিসূত্রে জানাযায়,২০১১সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা স্কুল থেকে এসএসসি পাশকরা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬৩৩জন তবে পরীক্ষার্থী ছিল ৬৮৮ জন।

 

 

৬৮৮জন থেকে মডেল টেষ্ট বাবদ নেয়া হয় ২০০টাকা করে মোট ১৩৭৬০০টাকা যার কোন রশিদ ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয়নি এবং স্কুলের রেজিষ্টারে তার কোন আলাদা খাতও খোলা হয়নি অর্থাৎ এই হিসাবটা পুরোপুরি অদৃশ্য।

 

 

অপরদিকে পাশ করা ৬৩৩জন ছাত্রছাত্রীদের প্রশংসা-পত্র দেয়ার নামে নেয়া হয় ৬০০টাকা করে তাহলে ওই হিসেবে দাঁড়ায়  ৩লক্ষ ৭৯হাজার ৮০০টাকা,সেটারও স্কুলের কোন রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ কোন ডকুমেন্টস  নেই এবং স্বয়ং প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ তা দেখাতে পারেননি।
অপরদিকে গোপন অনুসন্ধানে আরো ওঠে আসে, গত ১২বছরেই বোর্ডের বাইরে অতিরিক্ত ফি বাবদ আদায় করা হয় ৪লক্ষ ৮১হাজার ৬০০টাকা যা পুরোপুরি  আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠেছে এই প্রধান  শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

 

 

শুধু এখানেই শেষ নয় গত ১যুগে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের সার্টিফিকেট দেয়ার সময় আবার নেয়া হয় প্রতি সার্টিফিকেট ৫০০ টাকা করে সর্বমোট ৩লক্ষ টাকা।

 

 

 

হাতে আসা গোপন নথি পর্যালোচনায় আরো দেখা যায়, ২০২২সালে ৭১জন পরীক্ষার্থী থেকে কোচিং বাবদ আদায় করা হয় ১৩০০টাকা করে ৯২৩০০টাকা যা অবশ্যই প্রধান শিক্ষক স্বীকারও করেছেন তিনি বলেছেন ওই টাকা যারা কোচিং করিয়েছেন তাদের বন্টন করা হয়েছে, তবে সরকারি ভাবে স্কুলে কোচিং বন্ধ হলেও খোদ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই কোচিং বানিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে গুরুতর।

 

 

 

সবচেয়ে বেশী গুরুতর অভিযোগ যেটা  রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সেটা হলো তিনি চট্টগ্রাম মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং সাতকানিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতিরেকে পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৩সালে পরীক্ষার্থীদের হোষ্টেল চালু করে প্রতিজন ছাত্র  থেকে ৪০০০টাকা করে এবং ছাত্রীদের থেকে ৩৫০০ করে মোট ২মাসেই আদায় করেন ১লক্ষ ৭৭হাজার টাকা।
যা কর্তৃপক্ষের  অনুমতির বাইরে করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ নিজেই।
 তবে পরিচালনা পর্ষদের সরাসরি সম্মতি রয়েছে বলে প্রতিবেদককে জানান এই প্রধান শিক্ষক।

 

 

তবে ওই সময় কোন ধরেন অঘটন ঘটলে তার দায়ভারের জবাব কে দিত?
এমন প্রশ্ন করা হলে তাকে ওই সময় চুপ থাকতে দেখা যায়।

 

 

এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিলনা বলে জানান,একটু পর তিনি  শিক্ষা বোর্ড এবং উপজেলা প্রশাসন থেকেই একটা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত  বেশী জরুরী বলেও দাবী করেন।

 

 

 

তার দূর্নীতির হিসাব এখানেই শেষ নয়,২০১৮সালে স্কুলের ৪০০জন ছাত্রছাত্রীদের স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে বলে প্রতিজন থেকে নেয়া হয় ১৫০টাকা করে মোট ৬০,০০০টাকা যা প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ এখনো দিতে পারেননি।
এই টাকা নেয়ার স্বীকার করলেও রেজিষ্টারে তোলা সম্ভব হয়নি বলে সাফ জানান এই শিক্ষক।

 

 

 সম্প্রতি গেল বছর ২০২৩সালে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার সকল শিক্ষার্থীদের ট্রান্সক্রিপ্ট দেয়ার নামে ৫০টাকা করে ৩০০জন থেকে  মোট ১৫হাজার টাকা নেন, যার কোন হদিস স্কুল অফিসের নথিপত্রে নেই।

 

এদিকে ২০১৯সালে সায়েন্স শাখা হইতে ৩৯০টাকা মানবিক শাখা হইতে ৩৬০টাকা করে ৭২জন থেকে কেন্দ্র ফি বাবদ আদায় করা হয় ২৫হাজার টাকা, তা অবশ্যই ওই সময় ২০১৯সালের  মার্চের তিন তারিখ উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ তোলেছিলেন।

 

 

২০১১সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্কল সরকারি বই আনা বাবদ প্রতিবছরে ৩০হাজার টাকা করে ৩লক্ষ ৬০হাজার টাকার হিসাব ও তিনি দেখাতে পারেননি।

 

 

 

২০১১সালে ও ১২সালের নতুন একাডেমিক ভবন নির্মানের ঠিকাদারের সাথে এই শিক্ষকের দূর্নীতির যোগসাজশ ছিল বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।

 

 

 

সর্বশেষ তার নিজস্ব পরিচালনাধীন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগেও বিভিন্ন সময় দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র  নিশ্চিত করেছেন।

 

 

 

উপরোক্ত বিষয়াবলি আংশিক স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ তবে মনগড়া হিসাবের দলিল নেই বলেও মন্তব্য করেন,যা  হিসাব আছে তাও দিতে পারবেননা বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তিনি।

 

 

এদিকে দূর্নীতির ফিরিস্তির বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানান সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস।
একই কথা বলেন সাতকানিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

 

 

 

 

স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এলাকার দানবীর, শিল্পপতি ও  সহজ সরল হওয়ার সুবাদে মূলত প্রধান শিক্ষককে বিশ্বাস করেই পুরো প্রতিষ্ঠানটি আবু হানিফ নামে প্রধান শিক্ষকের হাতে ছেড়ে দেওয়ায়, তিনি তার ইচ্ছে মতো এটা পরিচালনা করে আসছেন।
মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.