ভিটে মাটি কৃষি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন , সংকট দূরীভুত করেননি সাবেক হুইপ
পটিয়ায় চামুদরিয়া খালের ভাঙ্গন
আ ন ম সেলিম, পটিয়া(চট্টগ্রাম) :
চামুদরিয়া খাল চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় খুবই পরিচিত একটি প্রাচীন খাল। শোভনদন্ডী ইউনিয়নের দক্ষিণ সীমানা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া এই খালের দক্ষিণে চন্দনাইশ ও পশ্চিমে আনোয়ারা উপজেলা। প্রবাহকালে এ খালের সাথে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট খাল ও ছড়া মিলিত হয়েছে।
বর্তমানে এই খালের ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় চামুদরিয়া ব্রীজের দুই পাশ বিলীন হতে চলেছে। পটিয়া উপজেলার হিলচিয়া, হাতিয়ারঘোনা, লাওয়ারখীল, জোয়ারা খানখানাবাদ এবং চন্দনাইশ উপজেলার পাঠানদন্ডী ও কানাইমাদারী গ্রামের খালের তীরবর্তী বসতবাড়ি,শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভিটে মাটি ও কৃষি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক পরিবার। হুমকির মুখে রয়েছে আরো অনেক ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়,পটিয়া, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ উপজেলার মাঝখানে প্রবাহিত চানখালী খালের লাওয়ারখীল অংশ
থেকে উৎপত্তি হয়ে চন্দনাইশ উপজেলার খানহাট হয়ে পাহাড়ের সাথে মিলিত হয়েছে চামুদরিয়া খাল। এর জলধারা জোয়ারের সময় পূর্বে পাহাড়ের দিকে এবং ভাটার সময় পশ্চিমে চানখালী খালে নিপতিত হয়।
তীব্র স্রোতের কবলে পড়ে খালের ভাঙ্গনে সহায় সম্বল ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ৬ গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার। বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চামুদরিয়া খাল ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বহু পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করে এই খাল পাড়ের হাজারো মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হিলচিয়া, লাওয়ারখীল, হাতিয়ারঘোনা ও জোয়ারা খানখানাবাদ গ্রামের অধিকাংশ এলাকা ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে কৃষি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা সাবেক বিতর্কিত হুইপ ও এমপি সামশুল হক চৌধুরীর বাড়ি এই শোভনদন্ডী ইউনিয়নে হলেও এব্যাপারে মন গলেনি তার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় প্রায় ১২ শত কোটি ব্যয়ে বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্পে অনেক অপ্রয়োজনীয় কাজ করে নিজের পকেট ভারি করলেও এ সংকট দূরীভুত করেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজিম উদ্দীন বাবুল বলেন,বর্ষা এলেই উজানের পানি প্রবাহ বেড়ে গিয়ে প্রবল স্রোতের সৃস্টি হয়। এসময় খালের দুই তীরের ভাঙ্গন বেড়ে যায়। এক সময় এই খাল ছিল অনেক ছোট। কালের বিবর্তনে উভয় পাশে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে আজ বিশাল আকারের খালে পরিণত হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে আমাদের ভিটেবাড়ি
খালে গ্রাস করতে পারে।
স্থানীয় আবু তাহের মেম্বার জানান, খালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক একর কৃষি জমি। এ ভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে এবং এর প্রতিরোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সবই খালে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । স্থানীয়ভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে ভাঙ্গা ইট পেলে প্রতিরোধের চেষ্টা করা হলেও পানির শ্রোতে আবারও ভেঙ্গে যায়।
শোভনদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানান, এই এলাকায় খালের ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এখনই খাল ভাঙ্গন ঠেকাতে না পারলে অবশিষ্টগুলোও বিলীন হয়ে যাবে। কয়েক বছর ধরেই ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। প্রতি বছরই ভাঙ্গনের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
কিছু কিছু এলাকায় ভিটে বাড়ির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড পওর-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহিদ জানান,এ খালের ভাঙ্গন প্রতিরোধে
প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। অর্থবরাদ্দ পেলে যত দ্রুত সম্ভব দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।