নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কর্ণফুলী নদী পারাপার

আনোয়ারা প্রতিনিধি 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী পারাপারের ভোগান্তির আরেক নাম ঘাট। ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিন চালিত বোট গুলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে পারাপার করে নদীতে। অন্য উপায় না থাকায় যাত্রীরাও চড়তে বাধ্য হন এসব বোটে। দু’পাড়ের মানুষের নদী পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শহরে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঘাটের ইজারাদারা নেন বাড়তি ভাড়াও। তার ওপর বোটে বহন করে ধারণক্ষমতা বাইয়ে অতিরিক্ত যাত্রী। ফলে ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দেন প্রতিদিন লক্ষধিক মানুষ। ঘটে নৌকা ডুবিসহ নানান র্দূঘটনা। রাতে নেওয়া হয় অতিরিক্ত ভাড়াও। গত মঙ্গলবার ১২ নম্বর ঘাটে যাত্রীবাহী কাটের নৌকা ডুবে সৈকত বড়ুয়া (২৮) নামে এ ব্যক্তি মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত নগর ও দক্ষিণ পাড়ের মানুষের পারাপারের জন্য ফিরিঙ্গি বাজার ফেরিঘাট, বাংলা বাজার ঘাট, ডাঙ্গারচর সল্টগোলা ঘাট, জুলধা ৯নং ঘাট, ১১নং মাতবর ঘাট, ১২নং লেচু তলা ঘাট, ১৪নং বদলপুরা ঘাট, ১৫নং রাঙ্গাদিয়া ফেরিঘাট সহ এসব ঘাটের ইজারা দেয় চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন। এসব ঘাট দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কর্ণফুলী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়াসহ কয়েকটি উপজেলার বিদেশযাত্রী, হজ্বযাত্রী, পশ্চিম অঞ্চলের শহরমূখী মানুষসহ মেরিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী, কাফকো, সিইউএফএল, কোরিয়ান কেইপিজেড, কর্ণফুলী টানেল ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের হাজারো চাকরিজীবীরা প্রতিদিন নদী পারাপার করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পারাপারের জন্য ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো চালিত হচ্ছে অদক্ষ চালক দিয়ে। নদীর এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নদী পার হয়ে থাকেন। নদীতে যখন পানি বাড়ে তখন ছোট নৌকা বা বোটে ৪০-৫০ জন মানুষ নিয়ে নদী পার হওয়া যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। নদীর পাড়েও যাত্রী ওঠানামায় রয়েছে নানা সমস্যা। ঘাটে ইজারাদারা মানুষের তুলনায় নৌকা না রাখায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। অন্য উপায় না থাকায় যাত্রীরাও চড়তে বাধ্য হন এসব বোটে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঘাটের ইজারাদারা নেন বাড়তি ভাড়াও। তার ওপর বোটে বহন করে ধারণক্ষমতা বাইয়ে অতিরিক্ত যাত্রী। ফলে ঘটে নৌকা ডুবিসহ নানান দুর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমেও ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার করলে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন যাত্রীরা।

যাত্রীদের অভিযোগ, ইঞ্জিন চালিত নৌকা গুলো ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। ঘাট পারাপারে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া, দেয়া হয় না লাইফ জ্যাকেট। এতে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। তারপরও যানজট এড়াতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয় তাদের। বিদেশযাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, বিদেশ যাওয়ার সময় নৌকা রির্জাভ করে বাড়তি ভাড়া দিয়ে পার হতে হয় আমাদের। অনেক সময় লোকাল নৌকা করে পার হতে গেলে ঘাটের মাঝিরা মালামাল ও অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করে হয়রানী করে। এতে করে অনেক সময় বিমান বন্দরে ঠিক সময়ে যাওয়াও সম্ভব হয় না। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে হরহামেশা নৌকাডুবিসহ ছোটখাট দূর্ঘটনা ঘটে।

নেছার উদ্দীন নামের এক চাকুরীজীবি অভিযোগ করে বলেন, আমি প্রতিদিন ১১নং মাতব্বর ঘাট দিয়ে নদী পার হয়। প্রতিদিনই দেখা যায় বোটে ৫০-৬০জন করে যাত্রী নেওয়া হয়। যা বোটের ধারণ ক্ষমতার বাইরে। বোটে গাদাগাদি করে বসতে হয়। এক প্রকার জীবন ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। একটি বোটে ২৫ জন করে নেওয়ার কথা থাকলেও ইজারাদার এবং মাঝিরা এই নিয়ম মানেনা। যদি কোনো দূর্ঘটনা ঘটে এর দায় তো কেউ নিবেনা। অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার কারণে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এরপরও প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম হৃদয় অভিযোগ করে বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ঘাট দিয়ে হাজারো শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ পারপার করে থাকে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব এ ঘাট থেকে আদায় করলেও ঘাটের যাত্রীসেবা ও মানোন্নয়নে নেয়নি দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ। যথাযথ তদারকির অভাবে বারবার দূর্ঘটনা ঘটে। যাত্রী সেবা নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে প্রশাসনের আরো জোরালো ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলার চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ঘাট গুলো ইজারা দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কোন ঘটনা ঘটলে দেখা যায় না কোনো ইজারাদারদের। ঘাটের নিরাপত্তার বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো দরকার।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ঘাটে যাত্রীদের হয়রানী, বাড়তি ভাড়া আদায়, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইসহ নানান অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানাও করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাড়া ও যাত্রী নির্ধারণ করে লাগানো হয়েছে সাইনবোর্ড। নৌকার মাঝি ও যাত্রীদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমরা তাদের নজরদারীতে রেখেছি।

সম্পাদনা: আই এইচ

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.