ফের রক্তাক্ত বসুরহাট: গুলিতে ছাত্রলীগ নেতা নিহত

মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে আবার রক্ত ঝরল। পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছেন আলাউদ্দিন (২২) নামের এক ছাত্রলীগ নেতা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এ দু’পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও মুহুর্মুহু গুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো বসুরহাট বাজার। বাদলের সমর্থকদের গুলিতে নিহত হন কাদের মির্জার অনুসারী আলাউদ্দিন। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দু’পক্ষের সংঘর্ষে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

গতকালের ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। জাকিরসহ দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া সংঘর্ষে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি, চার পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে বসুরহাট রূপালী চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার লোকজন হামলা ও মারধর করে। এর প্রতিবাদে গতকাল বিকেল ৪টায় রূপালী চত্বরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের একাংশ (মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপ)। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিজানুর রহমান বাদলের বক্তৃতা চলছিল। থানার পশ্চিম পাশের সড়ক (মাকসুদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) দিয়ে সে সময় সভায় হামলার চেষ্টা চালায় কাদের মির্জার সমর্থকরা। এ সময় একটি ককটেলের বিস্ম্ফোরণ ঘটলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় সভা। মানুষ দিজ্ঞ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। বাদলের সমর্থকরা কাদের মির্জার লোকজনকে ধাওয়া দিলে শুরু হয় উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। দফায় দফায় এ সংঘর্ষে কয়েকটি ককটেল বিস্ম্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বসুরহাট বাজারে। নারী-পুরুষ এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। অনেকে বসুরহাট বাজারে বিভিন্ন মার্কেটে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে দোকানপাট, যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষকারীরা কয়েকটি দোকান ও রাস্তায় থাকা যানবাহনে ভাঙচুর চালায়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য।

একপর্যায়ে কাদের মির্জার পক্ষের লোকজন বসুরহাট পৌরসভা কার্যালয়ে এবং মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকরা উপজেলা চত্বরে অবস্থান নেয়। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে শহরজুড়ে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি পুলিশ, দাঙ্গা পুলিশ টহল দিচ্ছিল। এরই মধ্যে রাত ১০টার দিকে মিজানুর রহমান বাদলের লোকজন একযোগে এসে বসুরহাট পৌরসভা কার্যালয়ে মুহুর্মুহু গুলি শুরু করে। গুলিতে কার্যালয়ের কয়েকটি জানালার কাচ ঝাঁজড়া হয়ে যায়। কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়া কাদের মির্জার অনুসারী অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া ককটেল বিস্ম্ফোরণ ও ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন আরও অন্তত ৫০ জন। গুলিবিদ্ধদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক আলাউদ্দিন নামের এক যুবককে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা বলে জানা গেছে। নিহত আলাউদ্দিনের বাড়ি উপজেলার চারকালী গ্রামে। তার বাবার নাম মইনুল হক। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জাকিরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে কাদের মির্জার অনুসারী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, প্রতিপক্ষ বাদল গ্রুপের লোকজন ভয়াবহ এ তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের মুহুর্মুহু গুলিতে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ নিয়ে কথা বলার জন্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের মোবাইলে বারবার কল দেওয়া হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি ও ওসি (তদন্ত) রবিউল হককে ফোন দেওয়া হলেও তারা কেউ সাড়া দেননি।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.