চট্টগ্রাম ব্যুরো
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে। এতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, সাবেক মেয়র, কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং সহযোগী সংগঠনের ১২৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।
৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬(৩) ধারায় এজাহারটি গ্রহণের নির্দেশ দিলে ১৪ ফেব্রুয়ারি মামলা নম্বর ১৩ হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে বলে রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ বুলেটিনকে নিশ্চিত করেছেন বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন।
মামলার বাদী বাকলিয়ার মধ্যম চাক্তাই এলাকার বাসিন্দা মো. ইলিয়াছ (৩১)। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, গত ৪ আগস্ট বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলের সময় বাকলিয়া থানাধীন নতুনব্রিজ আরাকান সড়কের মীর পেট্রোল পাম্পের সামনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আসামিদের মধ্যে প্রথম ১০ জনের নির্দেশে অন্যান্যরা দেশীয় অস্ত্র, কিরিচ, রামদা এবং লাঠি নিয়ে মহাসড়কে জড়ো হন। তারা মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণ ঘটায়।
বাদী আরও উল্লেখ করেন, মিছিলে অংশ নেওয়ার সময় ১ নম্বর আসামি তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কিরিচ দিয়ে কোপ মারার চেষ্টা করেন। তিনি প্রতিরোধ করতে গেলে ডান হাতের রগ কেটে যায়। অন্যান্য আসামিদের এলোপাতাড়ি আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন।
পরে স্থানীয় এক সিএনজিচালক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে আসামিদের অনুসারীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যান এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে পুনরায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হন।
মামলার এজাহার বিশ্লেষন করে জানা গেছে, মামলায় অন্তত ২৮টি এলাকার নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাকলিয়া থানা থেকে ৫৩ জন, পটিয়া থেকে ৭ জন, সাতকানিয়া থেকে ৬ জন, বোয়ালখালী থেকে ২ জন, সন্দ্বীপ থেকে ৩ জন এবং চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আরও অনেকেই আসামি হিসেবে রয়েছেন।
মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, বাকলিয়ার ছাত্রলীগ নেতা রিজান চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নুরুল আলম মিয়া ও হারুন রশিদ, চসিকের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর শাহিন আক্তার রুজি, সাতকানিয়ার সাবেক মেয়র জোবায়ের হোসেন, দক্ষিণ বাকলিয়ার যুবলীগ নেতা বখতিয়ার ফারুক, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ সজীব, সাবেক কারা পরিদর্শক মান্নান, বোয়ালখালী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান হাসান, ইপিজেড ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত, হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফৌজুল কবির কুমার, পটিয়া আওয়ামী লীগের মেম্বার সমিতির সেক্রেটারি মোহাম্মদ হাশেম।
এছাড়াও দক্ষিণ বাকলিয়ার মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মো. নাসির, কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আনোয়ার, সন্দ্বীপের আওয়ামী লীগ নেতা আবুল বাশার, চন্দনাইশের যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলামসহ আরও অনেকে আছেন।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।