চূড়ামণি ছনখোলায় গোটা পাহাড় গিলে খেলেও দেয়া যাচ্ছেনা পরিবেশ আইনের মামলা 

সাতকানিয়ায় পাহাড়া কাটা-  সাঁড়াশী অভিযানেও  থামছেনা, নেপথ্যে যাদের ইশারা

সাতকানিয়া প্রতিনিধি 
 সাতকানিয়ায় পাহাড় কাটা, অবৈধ ইটভাটা ও নকল  কারখানাসহ বিভিন্ন অনিয়মের  বিরুদ্ধে নিয়মিত  অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।
মাটি পাচার চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে ফৌজদারি মামলা না হওয়ায় কিছুতেই থামাচ্ছেনা মাটি দূর্বৃত্তদের দাপট।
মূলত ১৯৯৫ সাল থেকেই চূড়ামনি এলাকায়  জেবিএম ইটভাটার মধ্য দিয়েই পাহাড় নিধন কার্যক্রম শুরু হয়।
তখন থেকেই পাহাড় ও  মাটি দূর্বৃত্তরা এতই শক্তিশালী ও প্রভাবশালী যে প্রশাসনের নাকের ডগায় পাহাড় গিলেও তাদের বিরুদ্ধে  হচ্ছেনা পরিবেশ আইনের মামলা।
শনিবার সকালে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের চূড়ামনি ছনখোলা এলাকায় গিয়ে পাহাড়ের এই দৃশ্য দেখা যায়।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকালে এওচিয়ার  পাহাড় কাটার একটি  অভিযানে নেতৃত্ব দেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মাহমুদুল হাসান।
অভিযানে ৫ টি ইট ভাটা ও ১ টি জুতার কারখানাকে ১ লাখ টাকা করে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং একটি ইটভাটা সীলগালা করা হয়। জরিমানার টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয় বলেন  জানায়, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ৬ নম্বর এওচিয়া ইউনিয়নে পাহাড় কাটা ও লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা পরিচালনার দায়ে বিসমিল্লাহ ব্রিকস, এবিসি ব্রিকস, কেএমবি ব্রিকস, মা ব্রিকস ও এইচএবি ব্রিকসকে ১ লক্ষ টাকা করে সর্বমোট ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
 একই অভিযোগে খাজা ব্রিকস সিলগালা করে দেয়া হয় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের নাম ও লোগো ব্যবহার করে নকল জুতা তৈরীর কারণে লোটাস ফুটওয়্যার লিমিটেড নামক একটি কারখানাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এসময় সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, অনুমোদনবিহীনভাবে ইট উৎপাদন, পরিবেশগত ক্ষতি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি এবং নকল পণ্য তৈরীর কারণে ৬ টি ভাটা ও ১ টি জুতার কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলা থেকে অবৈধ ইটভাটা ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে বার বার অভিযান এবং  জরিমানা করা হলেও মূল কারবারিদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ায় রক্ষা করা যাচ্ছেনা এওচিয়া চূড়ামণি ও ছনখোলা এলাকার পাহাড় ও ফসলি জমিগুলো।
পাহাড় ও জমির টপসয়েল কেটে  রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ারা হলেন ছনখোলা এলাকার -হোসেন আহমদের ছেলে আব্দুল্লাহ, আজিজুল হকের, মোহাম্মদ আমিন,  প্রকাশ গলা কাঠা আমিন, গলা কাঠা আমিনের ছেলে ওবায়দুল
আবদুল আজিজের ছেলে আমিনুল হক।
এদিকে একই ইউনিয়নের  চূড়ামনি এলাকায় প্রতিদিন পাহাড় কেটে ইটভাটার মালিকের সাথে যোগসাজশে মাটি পাচার চক্রের হোতারা হলেন চুড়ামনির -সাদেক,হারুন,  দেলোয়ার,   মাওলানা সামশুল ইসলামের ছেলে কলিমুল্লাহ।
জানা যায়, গত ৫ই আগস্টের পরে বিশেষ রাজনৈতিক দলের শেল্টারে  মূলত উপরোক্ত ব্যক্তিরাই পাহাড়ের মাটি পাচার চক্র গড়ে তোলেন।
এই চক্রের হাত ধরেই এওচিয়ার ছনখোলা চূড়ামণি এলাকার পাহাড়ের মাটি পাওয়া যাচ্ছে বাঁশখালীসহ পাশ্ববর্তী বেশকয়েকটি ইউনিয়নে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, স্থানীয়রা তাদের খতিয়ানি পাহাড় ও ফসলি জমির টপসয়েল প্রকাশ্যে কাটলেও প্রশাসনকে অভিযোগ দেয়ার সাহস পাচ্ছেনা, কারণ প্রশাসনের কয়েকজন দূর্নীতিবাজ ও বিশেষ দলের এক নেতার শেল্টারে  পাহাড়া কাটার মহোৎসব চলছে বলে এই এলাকার জনসাধরণের বিশ্বাস।
এদিকে গত ২৯শে আগষ্ট সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মাহমুদুল হাসান এওচিয়া ৩নং ওয়ার্ডের চূড়ামণি পাহাড় কেটে মাটি ও বালি বিক্রয়ের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অচিরে মামলা ও বিচারের আওতায় আনা হবে।
 যারা পরিবেশ  ধ্বংসকারী কার্যকলাপে লিপ্ত তাদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কে তথ্য দিতে অনুরোধ করা যাচ্ছে, এমন ঘোষণা দিলে মাটি পাচার চক্র ভয়ে ছিলো কিছুদিন তবে শেষ পর্যন্ত চিহ্নিত কারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের না হওয়ায়, পাহাড় কাটায় আরো জোরেশোরে প্রতিযোগিতা চলছে বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
চূড়ামনি এলাকার কয়েকজন ইটভাটার মালিকের সাথে পাহাড় কেটে ভাটায় মাটি দেয়ার জন্য   একাধিক চুক্তি রয়েছে বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  একাধিক স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
জনশ্রুতি রয়েছে-চূড়ামনির  দেলোয়ার আর একই এলাকার হারুন গত কোরবানিরর ঈদে  প্রশাসনকে আস্ত গরুর রানও উপহার দেয় এই পাহাড়ের মাটি বিক্রির টাকা দিয়ে।
বালি মাটি এবং বনবিভাগের গাছ কাটার ব্যবসা চালানোর জন্য বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় এক নেতার শেল্টারে দেলোয়ার গড়ে তোলেছে বিশেষ বাহিনী।
বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে এই দেলোয়ার  দৈনিক ভিত্তিতে   পাহাড় সাম্রাজ্য থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
দেলোয়ার বাহিনী নির্বিঘ্নে পশ্চিম সাতকানিয়ায় তৎপরতা চালিয়ে যেতে চূড়ামণি ফরেষ্ট অফিসের গেইটের সামনে সাতকানিয়া বাঁশখালীর মূল সড়কে বিট(স্পীড ব্রেকার)ও বসিয়েছে অনুমোদনহীন ভাবে।
দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের রয়েছে হত্যাসহ একাধিক মামলা, সর্বশেষ সাতকানিয়ার আলোচিত নুরুল কবির হত্যাকান্ডেও রয়েছে সরাসরি সম্পৃক্ততা।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, পাহাড় কাটাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অলরেডি পরিবেশসহ বনবিভাগ সরেজমিনে এসে দেখে গেছে মামলা হচ্ছে।
এদিকে সাতকানিয়া বাঁশখালী সড়কে অনুমোদনহীন  স্পীড ব্রেকারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেনও বলে জানান।
মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.