কমিশনের জালে চট্টগ্রামের এলএ শাখা : দালালের দৌরাত্ম্যে অসহায় ভূমি মালিক!

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামের সরকারি নানা প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে থাকা এলএ শাখার কর্মকর্তারা দালালের মাধ্যমে মোটা অংকের কমিশনের জালে আটকে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দালালের কথামতো কমিশন না দিলে ভুয়া মালিক সাজিয়ে প্রকৃত ভূমি মালিকের পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেন বলে জানা গেছে। এসব বিষয় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক), বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের দফতরে লিখিত অভিযোগও করেছেন ভুক্তভোগী মো. নুরুল ইসলাম। তাও আবার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন ওই শাখার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। বিষয়টি তদন্তের জন্য সরকারি একাধিক কর্মকর্তা, দালাল ও অভিযোগকারীসহ  গত রোববার (২৯ আগস্ট) বৈঠক করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল।

আনোয়ারা উপজেলার চাতরী এলাকার হাজী আবুল হোসেনের ছেলে মো. নুরুল ইসলাম কর্তৃক দুদকে দায়ের করা অভিযোগ তদন্তের জন্য সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (বর্তমান) সিনিয়ির সহকারী সচিব বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মোনেম বিজনেস, সিআর দত্ত রোড ঢাকায় কর্মরত কায়সার খসরু, চট্টগ্রাম এলএ শাখার অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হামিদুল হক, সার্ভেয়ার মো. মুক্তার হোসেন, আবু কাউসার সোহেল, সাবেক সার্ভেয়ার আবদুর রব (বর্তমানে নোয়াখলীর চাটখীল উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত), এলএ শাখার দালাল আনোয়রা থানার চাতরী গ্রামের মৃত জাফর আহমদের ছেলে নবী হোসেন ও মৃত শেখ আহমদের ছেলে নুরুল কবির ও মৃত মনির আহমদের ওয়ারিশসহ ১৭ জনকে উপস্থিত হওয়ার কথা বললেও কায়সার খসরু, হামিদুল হক, আবদুর রব, নবী হোসেন, নুরুল কবির ও মৃত মনির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন উপস্থিত হয়ে তাদের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। বাকিরা অনুপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়  কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন নির্মাণ প্রকল্পে এলএ মামলা নং ৩০/২০১৬-১৭ ম‍ূলে ক্ষতিপূরণের টাকা প্রকৃত ভূমি মালিককে না দিতে নানারকম ফন্দি-ফিকির করতে থাকে। একপর্যায়ে এলএ অফিসের দালালের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ কামন দাবি করে। ভূমি মালিকের আমমোক্তার গ্রহীতা অভিযোগকারী কমিশনের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে এলএ শাখার কর্মকর্তা, দালাল ও অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাথে আঁতাত করে অবৈধভাবে বেআইনি রোয়েদাদ প্রস্তুত করে ক্ষতিপ‍ূরণের টাকা প্রকৃত ভূমি মালিককে না দিয়ে অন্য লোককে দিয়ে দেন। ফলে প্রকৃত পাওনা থেকে বঞ্চিত হন অভিযোগকারী।

এই বিষয়ে জানতে চট্টগ্রামের এলএ শাখার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদ কামালের মোবাইলে কল ও বার্তা দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের তদন্ত সম্পর্কে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (এলএ) দফতরে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করে অভিযোগকারী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আমমোক্তারনামামূলে আমি অধিগ্রহণকৃত জমির প্রকৃত হকদার কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আমাকে পাত্তাই দেন না। উল্টো দালালের মাধ্যমে আমার কাছে ৫০ শতাংশ কমিশন দাবি করেন। কমিশন দিতে রাজি না হওয়ায় আমার পুরো টাকাটাই আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছেন। আমি দুদক, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছি। বৈঠকেও যাবতীয় কাগজপত্রসহ বক্তব্য উপস্থাপন করেছি।

বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের বক্তব্য শুনেছেন। তবে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। এখানেও ন্যায়বিচার না পেলে আদালতে যেতে বাধ্য হব।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.