সাতকানিয়ায় ডলু নদী থেকে নির্বিচারে বালু তোলা হচ্ছে, ২০ বাড়ি ভাঙনে বিলীন

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড এলাকার ডলু নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ২০টি বাড়ি। এছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে আরও ২৭টি বাড়ি।

ভাঙনের ফলে নলুয়া-আমিলাইশ ইউনিয়নের সংযোগ সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে সেতুর গা ঘেঁষে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে সেতুর পিলার ও গার্ডার ভেঙে দীর্ঘ কয়েক মাস নলুয়া-আমিলাইশ-মৌলভীর দোকান সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্গতিতে পড়ে। এরপর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সেতুটি মেরামত করে কোনরকম চলাচলের উপযোগী করে দেয়।

অপরদিকে সরকারিভাবে নদীর বালু মহাল ইজারার মাধ্যমে জিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী জিয়াউর রহমান বৈধভাবে বালু উত্তোলনের দাবি করলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে সেতুর নিচ থেকে, জনবসতি, ফসলি জমি ও কবরস্থান এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছে। ইজারার কার্যাদেশে সেতু এলাকা থেকে ১ হাজার ফুট দূর এবং জনবসতি ও ফসলি জমি এলাকা থেকে বালু উত্তোলন নিষেধ থাকলেও ওই সিন্ডিকেট তা মানছে না।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, ওই সিন্ডিকেট ডলু নদীর নলুয়া এলাকা থেকে শুরু করে পার্শ্ববর্তী আমিলাইশ ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা হতে বালু উত্তোলন করছে। ফলে নদীর দুই তীর ধসে ইতিমধ্যে ২০টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। ফলে তারা খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় তাঁবু টানিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছে।

শুধু তাই নয়, ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে আমিলাইশ এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক প্রায় ১০০ মিটার ধসে গেছে। এছাড়া যেকোনো সময়ে আবার ভেঙে পড়তে পারে নলুয়া-আমলাইশ সংযোগ সেতুটি।

এলাকার বৃদ্ধ ফোরকান আহমদ, আবু তাহের, নুর আয়েশা, রহিমা খাতুন ও আবদুর আলীম জানান, এখনই যদি ডলু নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হয়, তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের বাপ-দাদার কবরস্থান ও ২৭টি পরিবারের বসতভিটা নদীর মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে।

এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত অভিযোগ দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হাকিম ও সোহেল রানা বলেন, ‘জিয়া এন্টারপ্রাইজই শুধু বালু উত্তোলন করছে না, ইজারার দোহাই দিয়ে এলাকার মিনহাজ নামের আরেক ব্যক্তিকে দিয়ে এবং পার্শ্ববর্তী চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী ও বশরত নগর এলাকার বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার মালিকদের এনে একাধিক স্পট থেকে সমানতালে বালু উত্তোলন করাচ্ছে। তাই এলাকাবাসী পক্ষে আমরা বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছি।’

এদিকে এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ইজারার স্থান নির্ধারণ করে উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উপজেলা ভূমি অফিসকে নির্দেশ দেন।

ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রহস্যজনক কারণে অভিযোগকারী এলাকাবাসীকে কোন ধরনের নোটিশ ছাড়াই অভিযুক্তদের নিয়ে ইজারা স্থান পরিমাপ করে চলে যান। এলাকাবাসী এখনও জানেন না ইজারার স্থান হিসেবে খালের কোন্ জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মহিউদ্দিন বলেন, ‘বালু উত্তোলনের জন্য ইজারার স্থান পরিমাপ করে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেতু থেকে ১ হাজার ফুট দূরে এবং কবরস্থান, বসতভিটে ও ফসলি জমি এলাকায় বালু উত্তোলন করতে পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগকারীরা আমার অফিসে আসলে তাদেরকে পরিমাপের ট্রেস ম্যাপ দেওয়া যাবে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমি ওই এলাকায় একটি অভিযান করেছিলাম এবং জরিমানাও করা হয়েছে। আমরা ভাঙনের বিপক্ষে। তাছাড়া আমি এখানে যোগদান করেছি অল্প কিছুদিন হচ্ছে। সবকিছু হয়ত আমার জানা নাও থাকতে পারে। আমি যতটুকু জানি ইজাদারদের কার্যাদেশ অনুযায়ী জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কেউ বালু উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ইজারা বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে সুপারিশ করা হবে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.