দীঘিনালা প্রতিনিধি: গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিকেন ও ল্যাম্প এখন শুধুই স্মৃতি। যারা টেবিলের মাঝখানে হারিকেন ও ল্যাম্পের মিট মিট আলোতে লেখাপড়া করেছেন তারা আজ অনেকেই হয়তো ছোট-বড় সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা। হারিকেন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ, সাইক্লোন, কাইক্লোস থেকে, যার অর্থ বৃত্ত বা চাকা। আর ল্যাম্প শব্দের উৎপত্তি ল্যাম্প এর বাংলা অনুবাদ অটোমেটিক স্ট্যাস্টিক্যাল ট্রান্সলেশনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে, যেখানে অপরিহার্য বাংলা অনুবাদ হলো “ল্যাম্প”। যার অর্থ- বাতি, প্রদীপ, দীপ, লাইট ইত্যাদি। পথিকের পথের সাথী হারিকেন ও ল্যাম্প আজ শতভাগ বিদ্যুতায়নের যুগে কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মানুষের নিত্যা সঙ্গী ছিলো যে হারিকেন ও ল্যাম্প। যা দিয়ে গ্রাম বাংলার মানুষ রাতের আঁধার দূরীভৃত করতো তা আজ খুজে পাওয়া মুশকিল। এই কেরোসিন তেলের হারিকেন ও ল্যাম্প জ্বালিয়ে রাতে কৃষকরা হালচাষ করতেও দেখা গেছে। রাতে মাছ শিকার করেছে। তা আর দেখা যায় না এখন গ্রামে, গঞ্জে, শহরে কোথাও। হারিকেন ও ল্যাম্প দেখতে কেমন এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য পরবর্তী প্রজন্ম ছেলে মেয়ে রা জাদুঘরে যেতে হবে। হারিকেন ও ল্যাম্প গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীকগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। বিদ্যুৎবিহীন গ্রামের আলোর চাহিদা মিটানো বা অন্ধকার দূর করতে এক সময় গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিলো হারিকেন ও ল্যাম্প। যার অন্যতম জ্বালানি উপাদান ছিলো কেরোসিন। তখনকার সময় এসব জ্বালানি গ্রামঅঞ্চলে রাতে বিয়ে, যাত্রাগান, জারি গান, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান করা হতো। হারিকেন ও ল্যাম্প জ্বালিয়ে বাড়ীর ওঠানে বা ঘরের বারান্দায় ছাত্র, ছাত্রীরা বসে এক সাথে লেখাপড়া করতো। আবার রাতে খাবারও খেতো। আজ আধুনিকতার ছোয়ায় বদলে গেছে সেসব। সেই হারিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় হারিয়ে গেছে এক সময়ের রাতের সঙ্গী হারিকেন ও ল্যাম্প। কয়েকদশকের বেড়ে ওঠা মানুষের স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে হারিকেন ও ল্যাম্প শব্দ টা কিংবা জ্বলার দৃশ্যগুলো। জ্বালানোর আগে ঘরের গৃহিনীরা ওটাকে পরিস্কার করে নিতো, যেন আলো আরো ভালো পরিস্কার দেখা যায়। এখন অনেকেই চিনতে পারবে না এই হারিয়ে যাওয়া প্রযুক্তিটি। শুধু ঘরের কাজেই নয় রাতের অন্ধকারে বাহিরে গেলেই ব্যবহার করা হতো হারিকেন ও ল্যাম্প। বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজ তথা পার্বত্য অঞ্চলের গ্রামে বসবাস করা মানুষের নিত্য সঙ্গীই যেন ছিলো হারিকেন ও ল্যাম্প। এখন তা আর পাওয়া যায় না। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা জুড়ে আগের মত এখন আর হারিকেন ও ল্যাম্পের ব্যবহার দেখা যায় না। দোকান গুলোতে পাওয়া যায় না হারিকেন ও ল্যাম্প। ভ্যান গাড়ী বা রাস্তা-ঘাটেও মিলছে না হারিকেন ও ল্যাম্প। উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাউন মিয়া (৬৬) ও মো. কাওসার(৪৫) বলেন, আমাদের পূর্বের সময়কালে হারিকেন ও ল্যাম্পের ব্যবহার খুব প্রয়োজনীয় ছিলো। প্রতি নিয়তই কাজে লাগতো এই হারিকেন ও ল্যাম্প। আগে তো গ্রাম গঞ্জে কারেন্টের দেখা মিলতোনা, তখন আমরা সবাই হারিকেন ও ল্যাম্প ব্যবহার করতাম। রাতের অন্ধকারে হারিকেন ও ল্যাম্প জ্বালিয়ে বহুদূর হেটে টেলিভিশন দেখতে যেতাম। এখন আর নেই সেই দিনগুলো। সবই যেন অতীতের স্মৃতি হয়ে আছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন সব কিছুই ডিজিটাল হয়ে গেছে। সব কিছুই এখন হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে। খুব মনে পরে অতীতের সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা। ২০০১ থেকে ২০০৩ সালের কথা তখনও হারিকেনের আলোয় পড়াশুনা করেছে অনেকেই। বিদ্যুৎ ছিলো কিন্তু যখন লোডশেডিং হতো তখন হারিকেন ও ল্যাম্প, বা মোমবাতির আলোতে বিভিন্ন কাজ চালিয়ে যেতো। কিন্তু সেই হারিকেন ও ল্যাম্প, বা মোমের বাতি এখন আর সে ভাবে চোখে পরে না।