মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলা : ২ দিনের রিমান্ডে মডেল পিয়াসা

রাজধানীর গুলশানের কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার সহযোগী হিসেবে আসামি মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার (৩ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসির আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করে।

এর আগে এ মামলায় পিয়াসার ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী তা বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষ বিচারক পিয়াসার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অন্যদিকে এ মামলার বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর, আনভীরের বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, আনভীরের মা আফরোজা বেগম, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা, সাইফা রহমান মীম, বাড়িওয়ালা শারমিন এবং ইব্রাহীম আহমেদ রিপনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালে জুন মাসে আসামি আনভির মুনিয়ার রূপ-লাবণ্যে মোহিত হয়ে এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে কলেজ হোস্টেল থেকে বনানিস্থ মাসিক ৬৫ হাজর টাকা ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। এরপর ৭-৮ মাসের মত তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে আসামীর মা ও বাবা মডেল পিয়াসার মাধ্যমে ভিকটিমকে তাদের বাসায় ডেকে এনে অবিলম্বে তাকে ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। অন্যথা হত্যার হুমকী দেয়। এমতাবস্থায় আনভির মুনিয়াকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কুমিল্লায় বোনের (বাদী) বাসায় পাঠিয়ে দেয়।

এরপর এবছরের ১ মার্চ পুনরায় বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ভিকটিমকে কুমিল্লা থেকে গুলশানের আভিজাত্য এলাকায় মাসিক ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় একা রেখে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। এতে ভিকটিম ২-৩ সপ্তাহের অন্তস্বত্বা হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে মুনিয়া আসামিকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এতে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি অপর আসামিদের মধ্যে প্রকাশ পেলে তারা পারিবারিক সুনাম, সুখ্যাতি রক্ষায় ভিকটিমকে দুনিয়া থেকে সরে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে আনভির মুনিয়াকে বলে, তুমি কুমিল্লা চলে যাও। মা তোমাকে মেরে ফেলবে। এ সময় মুনিয়া লাইভে এসে সব ঘটনা ফাঁস করে দেবে বললে আনভীর তাকে বলেন, এতো সময় আর তুই পাবি না। আমি তোকে দেখে নেব।

এজাহারে আরও বলা হয়, ভিকটিম ঘটনার আঁচ করতে পেরে আসামীগণের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঢাকা ছেড়ে যশোর পালিয়ে যেতে চায়। এ জন্য মৃত্যুর দিন ২৬ এপ্রিল ভোর ৫ টায় এবং সকাল ৭ টায় সে আসামী বাড়ীর মালিক শারমিন ও ইব্রাহিম আহাম্মদ রিপনের নিকট গাড়ী চায়। কিন্তু তারা গাড়ী না দিয়ে উল্টো বিষয়টি অপর আসামিগণের নিকট ফাঁস করে দেয়। এরপর আসামীগণ পরস্পর যোগসাজশে মুনিয়াকে বাসায় আটকে রেখে হত্যার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করে।

এদিন সকাল ৯টার দিকে মুনিয়া তার বোনকে ফোনে বলে, আপু আমার বিপদ। আনভীর আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। সে আমাকে বিয়ে করবে না, ভোগ করেছে মাত্র। তুমি তাড়াতাড়ি এসো। আমার বড় দূর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে। এরপর কিলিং মিশন দিয়ে ভিকটিমকে আসামিরা ধর্ষোণোত্তর হত্যা করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এরপর মুনিয়ার ফোন পেয়ে বোন বাদী নুসরাত কুমিল্লা থেকে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে এসে বাড়ির ম্যানেজারের সহায়তায় তালা ভেঙ্গে বাসায় ঢুকে দেখেন ভিকটিম ফ্যানের সাথে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে লটকানো। পুলিশ ভিকটিমের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। এতে ভিকটিমের যৌনাঙ্গে জখম ও রক্ত পরিলক্ষিত হয়। ভিকটিমের পরিধেয় বস্ত্র, ব্রাউজার, ব্র্যা, পাজামা, কাটা ছেঁড়া ছিল। যাতে প্রতীয়মান হয় হত্যার পূর্বে ভিকটিমের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছিল এবং ভিকটিম ধর্ষিতা হয়েছিল। এছাড়া বাসায় ভিকটিমের হাতের লেখা ৪ টি ডায়রী পাওয়া যায় যেখানে আনভিরের সাথে তার শারীরিক সম্পর্কের কথা তারিখসহ লেখা রয়েছে। এছাড়া একটির কভারে ‘আনভীর আই লাভ ইউ’ লেখা পাওয়া যায়।

এজাহারের শেষে বলা হয়, আসামি টাকা ও ক্ষমতার দাপটে দেশের অনেক অসহায় সুন্দরী নারীদের তার আয়ত্বে এনে আনন্দ-ফূর্তিতে মত্ত থাকে। টাকার জোরে দেশের অসহায় গরিব সুন্দরী মেয়েদের পণ্যের মত ব্যবহার করে। অবশেষে তাদেরকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে অথবা হত্যা করে। এছাড়া মডেল পিয়াসার সঙ্গেও রয়েছে তার বিশেষ সম্পর্ক। পিয়াসা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মুনিয়াকে বিভিন্ন সময় ফোন করে আনভীরের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলে। এছাড়া সে আনভীরের মা আফরোজার কাছে ভিকটিম সম্পর্কে কুৎসা রটনা করে তাকে হত্যার প্ররোচনা দেয়। ধর্ষোণোত্তর এ নির্মম হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচারে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করতেও বলা হয় মামলার আবেদনে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.