বাঁশখালীর পুঁইছুড়িতে অবৈধ বালু উত্তোলনের রমরমা ব্যবসা, হুমকির মূখে রাস্তাঘাট,ঘরবাড়ি

বাঁশখালী প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছুড়ি ছড়া থেকে অবৈভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। পাহাড়ের পাদদেশে বেয়ে আসা ছড়া হতে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে পাহাড় ধ্বসে বিশাল ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছে বনভূমি। তার সঙ্গে পাচার করা হচ্ছে গাছ পালা। যার কারনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে রাস্তা ঘাট। বালু ব্যবসায়ীরা রাতভর বালু উত্তোলন করে ট্রাক যোগে ভোর সকাল থেকে বিক্রি শুরু করেন। ক্রেতারা বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। এই শুষ্ক মৌসুমে এলাকায় প্রবাসী ও ব্যবসায়ীরা পাঁকা ভবন তৈরির কার্যক্রম শুরু করায় বালুর চাহিদা বেড়ে গেছে। এইজন্য বালু ব্যবসায়ীদের তৎপরদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। পুঁজি ছাড়া এই বালু ব্যবসার কাড়ি কাড়ি টাকার লোভে অতি মুনাফালোভী ব্যক্তিরা বালু ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। পাহাড়ের পাশের এ ছড়া থেকে বালু কেটে পাচার করায় বর্তমানে নদীর রূপ নিচ্ছে। যার ফলে ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন কয়েক বছর পূর্বে নির্মিত ব্রীজটির পাশ থেকে অতিরিক্ত বালি উত্তোলনের কারণে পিলারের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে ব্রীজ ভেংগে পড়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এসব কর্মকান্ডে বাধা না দিয়ে নীরব ভুমিকা পালন করছে। গাছ পাচার, পাহাড় ও ছড়া কাটার ক্ষেত্রে কেউই বিধি-বিধানের তোয়াক্কা করছে না। পাহাড় কেটে ও ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে বির্স্তৃন পাহাড় ও সবুজ বনভূমি, বর্তমানে এই বনভূমি চুনতি অভয়ারন্য হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিন দিন মরভুমিতে পরিণত হচ্ছে। সরজমিনে বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থান পরির্দশন কালে স্হানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাঁশখালী দৃর্গম পাহাড়ী এলাকা পূর্ব চাম্বলের হরিনাঘোনা, বড়ডেপা, চরার ঘাট, পাতলা মার্কেট ও পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব পুঁইছড়ি, দক্ষিণ পুঁইছুড়ি সাইরপাড়া ছড়া, নাপোড়া ছাড়া, বৈলছড়ী আজিজিয়া মিল্লিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ছড়া, কালীপুরে ছড়া,পূর্ব বৈলছড়ি ছড়া, পূর্ব চেচুরিয়া, পূর্ব কোকদন্ডি ছড়া,সাধনপুর সাহেবের হাট সংলগ্ন সাধনপুর ইউপি কার্যালয়ের পাশের ছড়া, খানখানাবাদ ইশ্বর বাবুর হাটে ও পুকুরিয়া সাঙ্গু নদী থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী ক্ষতিপয় রাজনৈতিক নেতা জনপ্রতিনিধি সকলে এই অবৈধ ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। যার ফলে এসব বনভূমি এলাকা থেকে একশ্রেণীর স্থানীয় ক্ষতিপয় নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালী চক্র সিন্ডিকেট গঠন করে প্রতিযোগিতা মূলকভাবে টিলা ও ছড়া কেটে বালু উত্তোলন করে প্রতি ট্রাক ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। সাথে সাথে বনের গাছ ও কেটে সাবাড় করছে ভূমিদস্যুরা। সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে সরকারী অনুমোদন বিহীন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তা-ঘাট ও শত শত বছরের পাহাড় গুলো ধ্বংস হয়ে বনায়নের ব্যাপত ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে।যেভাবে টিলা, ছড়া, পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা খুবই বিপর্যয়। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ চরমভাবে হুমকির মুখে পড়বে। পূর্ব পুঁইছুড়ি ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন ছড়া থেকে বালু কেটে পাচার করায় বর্তমানে নদীর রূপ নিচ্ছে। যার ফলে ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন কয়েক বছর পূর্বে নির্মিত ব্রীজটির পাশ থেকে অতিরিক্ত বালি উত্তোলনের কারণে পিলারের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে ব্রীজ ভেংগে পড়েছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে রাস্তা ঘাট। পুরো এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন রোধে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকায় দিন দিন পাহাড় গুলোর ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার ফসলী জমি, জীব বৈচিত্র্য, ঘর-বাড়ী, বসত ভিটা, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ, কবরস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ মূলবান জাতীয় সম্পদ বিলীন হওয়ার পাশা-পাশি পরিবেশের বিপর্যয় গড়ছে। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) উপজেলার পুঁইছুড়ি ইউপি’র পূর্ব পুঁইছুড়ি এলাকায় ছড়া হতে অবৈধ ভাবে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয়রা জানাই, উপজেলার পুঁইছুড়ি ইউপি’র পূর্ব পুঁইছুড়ি এলাকায় ৬-৭ জনের একটি সেন্ডিকেটের নেতৃত্বে পাহাড়ের পাদদেশে ঘেসে আসা ছড়া থেকে বিভিন্ন অংশ জুড়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রির উদ্দেশ্যে স্তুপ করে রেখেছে। এ সিন্ডিকেটের পাশাপাশি রয়েছে ছোটখাট অনেক বালু ব্যবসায়ী। সারা দিন-রাত ট্রাকে মাটি ও বালু পরিবহন করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ধসে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রভাবশালীরা অবাধে বালু উত্তোলন করছে। এতে বাঁধ, ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়েছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ইউপি সদস্য মোঃ ফজলুল কবির ফজু বলেন, বালু-খেকোদের উৎপাতে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। আমি অনেকবার বারণ করার পর ও তারা অবাধে বালু উত্তোলন করছে। প্রশাসনিকভাবে বালু তোলা বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বালু তোলার কারণে ছড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে একটি ব্রীজ ভেঙ্গে পড়েছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। পুঁইছুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সোলতানুল গনী চৌধুরী জানান, পূর্ব পুঁইছুড়ি এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে এলাকার সাধারন মানুষের বাড়িঘর থেকে শুরু করে ফসলী জমি বিলিন হয়ে পড়ছে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে রাস্তা-ঘাট ও শত শত বছরের পাহাড় গুলো ধ্বংস হয়ে বনায়নের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণ জনগণের কথা বিবেচনা করে এর প্রতিকার চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলে সেই যেই কেউ হউক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে থানা পুলিশ ও ভূমি অফিসকে প্রয়োজনীয় দির্ক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নাপোড়া এলাকায় পাহাড় কেটে মাঠি বিক্রি কারীদের কে জরিমান দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কারীদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের বিরুদ্ধে খুব শীগ্ররই পুরো বাঁশখালী ব্যাপী অভিযান ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.