লাখ টাকার বেশি দর উঠছে না কোটি টাকার মার্সিডিজ গাড়ির!

জার্মানিতে তৈরি বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের বিলাসবহুল গাড়ি মার্সিডিজ বেঞ্জ। চট্টগ্রাম কাস্টমস কালো রঙের এ গাড়িটির দাম হেঁকেছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। বিপরীতে গাড়িটির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৫ লাখ ১২ হাজার টাকা।  এর আগে প্রায় পাঁচবার নিলামে তুলেও এর বেশি দর উঠেনি গাড়িটির।

৫ লাখ টাকায় হলেও নিলামে এই গাড়ির একজন ক্রেতা পাওয়া গেছে। কোটি টাকার বিএমডব্লিউ, ডায়িও মুসো, মিতসুবিশি শোগান ও মার্সিডিজ এমএল ব্র্যান্ডের গাড়ির কোনো ক্রেতাই খুঁজে পায়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

সবমিলিয়ে এবার ৭৯টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছিল। গত ২৫ সেপ্টম্বর এ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। আজ নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে কাস্টম।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকেরা কারনেট বা পর্যটন সুবিধায় এসব বিলাসবহুল গাড়ি এনেছিলেন। কিন্তু ওই সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানিকারকেরা গাড়িগুলো বন্দরে ফেলে রেখে সটকে পড়েন। তাই এসব গাড়ি বিক্রির জন্য বারবার এ নিলাম আয়োজন হচ্ছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, মার্সিডিজ বেঞ্জের ১৯টি, বিএমডব্লিউ ১৫টি, লেক্সাস ৭টি, মিতসুবিশি ২২টি, ল্যান্ড রোভার ৪টি, জাগুয়ার ২টি, ল্যান্ড ক্রুইজার ২টি, পাজেরো ২টি, টয়েটা ২টি, ডিয়াও ১টি, ভলকস ওয়াগন ১টি, ফোর্ড ১টি, হোন্ডা ব্যান্ডের ২টিসহ মোট ৭৯টি গাড়ি নিলাম ডাকা হয়েছে। এরমধ্যে মার্সিডিজ বেঞ্জের তিনটি গাড়ি কিনতে দরপত্র জমা দিলেও কোন দরপত্র পড়েনি ১৬টি গাড়ির। এছাড়া প্রায় চার কোটি টাকার বিএমডব্লিউ গাড়ির দাম দেড় কোটি টাকা ধরেও কোন ক্রেতা টানা যায়নি। ১৫টি বিএমডব্লিউ গাড়ির বিপরীতে দরপত্র পড়েছে ১১টিতে। মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের ২২টি জীপ, মাইক্রো গাড়ির মধ্যে ক্রেতা এসেছে মাত্র দুটি গাড়ির জন্য। এছাড়া হোন্ডা ব্র্যান্ডের দুটি গাড়ির বিপরীতে দরপত্র পড়েছে একটিতে।

কোন গাড়ির কত দাম

নিলামে সর্বোচ্চ দরের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিলামে সবচেয়ে বেশি দর উঠেছে কালো রঙের ৪৩৯৪ সিসির ল্যান্ড রোভার মডেলের গাড়িটির। এই গাড়ির জন্য ৫০ লাখ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছে ঢাকার সুইট এগ্রোভেট লিমিটেড। এই ব্র্যান্ডের ৪টি গাড়ির দর পড়েছে ২৮ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া জাপানের তৈরি লেক্সাস ব্র্যান্ডের পাঁচটি গাড়ির দর পড়েছে ১৫ লাখ থেকে ২৯ লাখ টাকা। যুক্তরাজ্যের তৈরি জাগুয়ার ব্র্যান্ডের দুটি গাড়ির দর পড়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার থেকে ১৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্র্যান্ডের দুটি গাড়ির দর পড়েছে ২৬ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা। জাপানের তৈরি মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের ১৬টি গাড়ি ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪০ লাখ টাকায় কেনার দর দিয়েছেন ক্রেতারা। তাছাড়া জার্মানীর তৈরি বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের ১১টি গাড়ির দর পড়েছে ১১ লাখ থেকে ২৯ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকেই সোয়া ১ কোটি থেকে ৪ কোটি টাকার বেশি দামের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি পড়ে আছে বন্দরে। গত জুলাই মাসে ১০৮টি গাড়ি নিলামে তুলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। সেবার সবগুলো গাড়ির জন্য দরপত্র জমা পড়ে ১২৬টি। শেষ পর্যন্ত ২৯টি গাড়ি বিক্রিও হয়। এরপর বাকি গাড়িগুলো বিক্রির জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করে কাস্টমস হাউস।

কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার ও নিলাম কমিটির সুপারভাইজার সন্তোষ সরেন সিভয়েসকে বলেন, আমরা ছয়টি ছাড়া বাকি সব গাড়িতে সাড়া পেয়েছি। তবে গাড়িগুলোর বিক্রির অনুমোদনের বিষয়ে আমরা এখনো কোন সিদ্ধান্ত নিই নি। আমরা আগ্রহী ক্রেতাদের দর আরো যাচাই-বাছাই করে যেগুলো সন্তোষজনক সেগুলো বিক্রির অনুমোদন দেবো।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.