কাটা হলো ৪০ কেজি ওজনের কেক। করা হল বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। আয়োজন হল বিশাল মেজবানের। সারা ক্যাম্পাস যেন মেতে উঠেছিল সৃষ্টি সুখের উল্লাসে । ক্যাম্পাসের সর্বত্র যেন প্রানের স্পন্দন। বইছে যেন শিক্ষার সুবাতাস। এ যেন নতুন এক বিজয়ের প্রত্যাবর্তন। আগত অতিথি ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এত বড় আয়োজন আর কখনো হয় নি। তাঁদের মতে এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির প্রভাবে। বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, প্রগতিশীল চিন্তা চেতনা ও সংস্কৃতি চর্চায় ছিল অলিখিত নিষেধাজ্ঞা।
সীতাকুন্ডের কুমিরায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) এর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের চিত্র এটি। আর এই বিশাল আয়োজনের জন্য তাঁরা ধন্যবাদ দিতে চান চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে। তিনি নবগঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান।
১৭ মার্চ বুধবার আইআইইউসি কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্ম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি। বক্তব্যে তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির জন্ম হতো না। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারে নি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ-তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ বাঙালি জাতির অন্তরে চির জাগরুক হয়ে আছে। জাতির পিতার সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়া। তাঁর দূরদর্শী, সাহসী ও ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার নাগপাশ থেকে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। বাঙালি পেয়েছিল স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। প্রফেসর ড.আবু রেজা নদভী এমপি বলেন, যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যখন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত তখনই ঘাতকচক্র তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বাঙালী জাতির হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নাম। কিন্তু ইতিহাস আপন গতিতেই চলে। জোর করে কারো নাম বা অবদানকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যায় না।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস বিকৃত করে যারা বঙ্গবন্ধুকে তাঁর সোনার বাংলায় নিষিদ্ধ করেছিল তারা আজ চরমভাবে পরাজিত। বাঙালীর হৃদয়ে-জাগরণে দেদীপ্যমান বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব। তিনি আরো বলেন বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ এক, অভিন্ন। জাতির পিতা মিশে আছেন, মিশে থাকবেন জাতির অগ্রযাত্রার প্রতিটি অনুভবে সাহস, শক্তি ও অনুপ্রেরণা হয়ে। প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি আইআইইউসি’তে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে উক্ত কর্ণার জন্য বেশকিছু গবেষণা ধর্মী ও জার্নাল প্রদান করেন।
প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবী-দাওয়া ও যারা ইতিপূর্বে অবিচারের শিকার হয়েছে তা আগামী এক বছরের মধ্যে সমাধানের এবং শিক্ষক-ছাত্রদের বিদেশি স্কলারশিপ আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুনরায় চালুর আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আইআইইউসি’র শিক্ষক-ছাত্রদের বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টিরও আশ্বাস প্রদান করেন।
নবগঠিত আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ট্রাস্টি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ১০০তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সম্মানিত ট্রাস্টি প্রফেসর ড. সালেহ জহুর। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক শফীউর রহমানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নবগঠিত আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সম্মানিত ট্রাস্টি প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নেজামী, প্রফেসর কাজী দ্বীন মুহাম্মদ, আবু সুফিয়ান, মুহাম্মদ ইসমাঈল মানিক, মিসেস রিজিয়া রেজা চৌধুরী, মাহবুবুল আলম, আ.ম.ম টিপু সুলতান চৌধুরী, সিরাজুল করিম, বদিউল আলম।
আলোচনা সভায় আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও প্রচুর শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।