সাতকানিয়ায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বেত্রাঘাতে- ছাত্র হাসপাতালে

শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

সৈয়দ আককাস উদদীন

 

সাতকানিয়ায় হেফজখানায় পড়ুয়া হাবিবুর রহমান বাবলু (১০) নামে এক ছাত্রকে নির্দয়ভাবে বেত্রাঘাত করেছেন মাওলানা আহমদ শফি (৪০) নামে একই মাদ্রাসার এক শিক্ষক।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মাইজ পাড়া ছদাহা আয়শা ইসলামিয়া ট্রাষ্ট এতিমখানা ও হেফজখানা নামে এক মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। বাবলু একই এলাকার সৌদি আরব প্রবাসী আবদুর রশিদের ছেলে।

আজ (শনিবার) সকালে ছাত্রটিকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে ছাত্রটির মা বাদী হয়ে আজ (শনিবার) সন্ধ্যার দিকে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

এ ব্যাপারে ছাত্রটির মা হাছিনা আক্তার বলেন, বিগত এক মাস ২৮ দিন আগে আমার ছেলেকে আয়েশা ট্রাষ্টে হেফজ করার জন্য দিয়েছিলাম। এর আগে ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া লেখা করেছে। হুজুর আহমদ শফি ঘটনার কয়েকদিন আগে মাদ্রাসার গেইট দেওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে দুই লাখ দাবী করে। তখন আমি বলি, ছেলের বাবা বিদেশ থাকে। সম্প্রতি আমার একটা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলের হেফজ শেষ হলে সামর্থ্যে যা পারি তা মাদ্রাসাকে সহায়তা করব। তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসাটি আমার পাড়ার মধ্যে অবস্থিত। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ছেলে ছুটিতে বাড়ি আসে। গত বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বাড়ি না আসায় হুজুরকে ফোন দিলে তিনি আমাকে বলেন, ছেলে পড়া শেষ করতে পারেনি। তাই এ সপ্তাহে সে বাড়ি যাবে না। পরে বৃহস্পতিবার বিকাল বেলা মাদ্রাসার দেওয়াল টপকিয়ে পালিয়ে বাড়ি আসলে দেখি তাকে সারা শরীরে বেত দিয়ে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে। মূলত হুজুরের দাবীকৃত দুই লাখ টাকা না দেওয়ায় ছেলেকে দুষমনি করে পিটিয়েছে হুজুর। সাতকানিয়া হাসপাতালে চিকিৎসারত ছেলেকে আজ (শনিবার) উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছেন। এ ঘটনায় আমি থানায় হুজুরের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে মামলা করেছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক ও ছদাহা আয়শা ইসলামিয়া ট্রাষ্ট এতিমখানা ও হেফজখানার পরিচালক মাওলানা আহমদ শফি মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ছেলেটি পড়া-লেখায় অমনোযোগী ও ফাঁকি দিচ্ছে। তাই শাসন একটু বেশি হয়েছে। এ ব্যাপারে কয়েকজন ইউ.পি সদস্যসহ মাদ্রাসার অফিসে বসে বিষয়টি সমাধান করেছি এবং ছেলেটির মায়ের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছি। তবুও পাড়ার লোকজন এসে আমাকে মারধর করেছে। টাকা চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রাষ্টের পক্ষ থেকে সব ছাত্রদের ফ্রি খাওয়ানো ও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. এ পি বণিক বলেন, ছেলেটির অবস্থা তেমন ভালো না। যে কোন সময় খারাপ হয়ে যেতে পারে। অতি সহসা তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে ছেলেটিকে।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান বলেন, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রকে পেটানোর ঘটনাটি খুবই নির্মম। ঘটনা শুনে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনায় ছাত্রটির মা হাছিনা আকতার বাদী হয়ে মাওলানা আহমদ শফি ও মো.লোকমান নামে দুইজনকে আসামী করে আজ সন্ধ্যার দিকে থানায় মামলা দায়ের করেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.