রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তনে অ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে কোপার সেমিতে রিয়াল

স্পোর্টস ডেস্ক

 

নগরপ্রতিদ্বন্দ্বি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পিছিয়ে পড়ে রিয়াল মাদ্রিদ। আর তাতেই শঙ্কা জেগে ওঠে কোপা দেল রে’র কোয়ার্টার ফাইনালে থেকেই বিদায়ের। তবে রিয়াল মাদ্রিদের রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তন তখনও বাকি। ৭৯তম মিনিটে রদ্রিগো গোল করে রিয়ালকে সমতায় ফেরান। এরপর নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-১ গোলে সমতায় শেষ হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ে এসে জ্বলে ওঠে রিয়াল মাদ্রিদ। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে তখন রিয়াল দেখালো রোমাঞ্চকর এক প্রত্যাবর্তন। অতিরিক্ত সময়ের ১০৪তম মিনিটে করিম বেনজেমা গোল করে রিয়ালকে ২-১ গোলে এগিয়ে নেন আর ম্যাচের শেষ দিকে এসে দুর্দান্ত এক গোল করে রিয়ালের জয় নিশ্চিত করেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। এতেই ৩-১ গোলের রোমাঞ্চকর এক জয় নিয়ে স্প্যানিশ কোপা দেল রে’র সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় রিয়াল।

রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তনে অ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে কোপার সেমিতে রিয়াল

কোপা দেল রে’র কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠের লড়াইয়ের আগে মাঠের বাইরে এক দফা লড়াই হয়ে যায়। ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবাদী আচরণের কারণে তোলপাড় শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে কোনো এক অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ সমর্থক ভিনিসিয়াস জুনিয়রের প্রতি বর্ণবাদী আচরণ করতে তার পুত্তলিকা মাদ্রিদ শহরের এক ব্রীজে ঝুলিয়ে দেয়। আর এরপরেই নিন্দায় ভেসে যায় গোটা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। এমন বর্ণবাদী আচরণকে তীব্রভাবে ঘৃণা করা অ্যাটলেটিকো এমনটাই অফিসিয়াল বিবৃতি দেয় মাদ্রিদের ক্লাবটি। এরপর রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকেও ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে সমর্থন দিয়ে বিবৃতি দেয়।

মাঠের বাইরে জ্বলে ওঠা আগুন দেখা যায় মাঠের খেলাতেও। ম্যাচের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকে অ্যাটলেটিকো। ম্যাচের ১৯তম মিনিটে এসে দারুণ এক দলগত আক্রমণে আলভারো মোরাতার গোলে এগিয়ে যায় অ্যাটলেটিকো। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড় আলভারো মোরাতা অ্যাটলেটিকোকে এগিয়ে নেওয়ার পরে টনক নড়ে রিয়ালের।

রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তনে অ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে কোপার সেমিতে রিয়াল

তবে অ্যাটলেটিকোর সঙ্গে লড়াইয়ে প্রথমার্ধে পেরে উঠছিল না রিয়াল। উল্টো মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে ৪৪তম মিনিটে চোটে পড়েন লেফট ব্যাক ফারল্যান্ড মেন্ডি। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মিডফিল্ডার দানি সেবায়োস। আর লেফট ব্যাক পজিশনে খেলেন আরেক মিডফিল্ডার এডুয়ার্ড কামাভিঙ্গা। প্রথমার্ধ শেষ হয় অ্যাটলেটিকোর ১-০ গোলে এগিয়ে থাকায়।

দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই দারুণ আক্রমণ সাজায় রিয়াল। ৫৮তম মিনিটে ডি বক্সের ঠিক সামনে থেকে দারুণ এক শট নেন করিম বেনজেমা তবে তার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন জান অবলাক। এরপর দুই পক্ষই বেশ কিছু আক্রমণ করে তবে কিছুতেই গোলের দেখা পাচ্ছিল না। ৭৩তম মিনিটে রিয়ালের ডি বক্সের সামনে ফ্রিকিক পায় অ্যাটলেটিকো। সেখান থেকে দারুণ এক ফ্রিকিক নেন গ্রিজম্যান তবে তার ফ্রিকিক লাফিয়ে রুখে দেন থিবো কোর্তোয়া।

রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তনে অ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে কোপার সেমিতে রিয়াল

সমতায় ফেরার জন্য রিয়ালকে আর বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। নির্ধারিত সময়ের মাত্র ১১ মিনিট বাকি থাকতে লুকা মদ্রিচের বাড়ানো বল ধরে কয়েকজন অ্যাটলেটিকোর ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান পায়ের বাইরের অংশ দিয়ে শট নেন রদ্রিগো। আর তাতেই পরাস্ত জান অবলাক। কাছের পোস্ট দিয়ে বল জালে আর রিয়াল ফেরে সমতায়।

ম্যাচের বাকি সময় করিম বেনজেমা আর ভিনিসিয়াস জুনিয়র একের পর এক গোলের সুযোগ মিস করতে থাকে। তবে সবচেয়ে বড় সুযোগ হাতছাড়া করেন অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান। ৮৫তম মিনিটে ডান দিক থেকে ভেসে আসা বল রিয়ালের ডি বক্সের ভেতর পেয়েও মাত্র ১২ গজ দূর থেকে শট নিয়েও রাখতে পারেননি লক্ষ্যে। আর তাতেই ম্যাচে এগিয়ে যাওয়া হয়নি। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় ১-১ গোলের সমতায়। আর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তনে অ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে কোপার সেমিতে রিয়াল

অতিরিক্ত সময়ের ৯৯তম মিনিটে দ্বিতীয় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন অ্যাটলেটিকোর ডিফেন্ডার স্টেফান স্যাভিচ। এর মিনিট পাঁচেক পর করিম বেনজেমা গোল করে রিয়ালকে লিড এনে দেন। ডান দিক থেকে ডি বক্সে ঢুকে গোলমুখে ক্রস বাড়ান মার্কো অ্যাসেন্সিও। তবে গোলমুখে দাঁড়িয়ে বল পেয়ে শট নিয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। আর তার পায়ে লেগে বল পেছনে থাকা বেনজেমার কাছে চলে যায়। ফাঁকায় বল পেয়ে দারুণ শটে বল জালে জড়ান বেনজেমা। আর তাতেই লিড নেয় রিয়াল।

রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তনে অ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে কোপার সেমিতে রিয়াল

ম্যাচের তখন মাত্র এক মিনিট বাকি। নিজেদের ডি বক্সে দারুণ এক ট্যাকেলে বল জেতেন দানি সেবায়োস। আর বল জিতেই সামনের দিকে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে বাড়ান। বল নিয়ে ক্ষীপ্রতার সঙ্গে বাঁ দিক থেকে অ্যাটলেটিকোর ডি বক্সে ঢুকে আবার ডান দিকে চলে যান। এরপর জায়গা করে শট নিয়ে বল জালে জড়িয়ে রিয়ালকে ৩-১ গোলে এগিয়ে নেন। আর নিশ্চিত করেন রিয়ালের সেমিফাইনালের টিকিট।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.