‘রাস্তা কারো বাপের না’

ইটভাটার মাটিতে পিচ্ছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নিয়ে ক্ষোভে শিক্ষার্থীর ভিডিও বার্তা

মোঃ জাহেদুল ইসলাম: ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার সময়  ট্রাক থেকে পড়া মাটি বৃষ্টিতে কাদায় পরিণত হয়ে ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। এতে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছ বিভিন্ন যানবাহন।

রবিবার (১৯ মার্চ) সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলে মহাসড়ক কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। তাছাড়া কাঁদা মাটির সাথে রয়েছে লবণবাহী গাড়ি থেকে নিসৃত লবণ পানি। ফলে সকালে প্রায় কয়েক ঘণ্টা মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে মহাসড়ক পরিণত হয় মরণফাঁদে। যার কারণে সকাল সাড়ে ৮ থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে সড়কের দুপাশে ৪-৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ যাত্রী ও পথচারীরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। দুপুরে বৃষ্টির ফোঁটা কমলে সড়ক কিছুটা শুকিয়ে যাওয়ার পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শুকনো মৌসুমে পাকা সড়কের ওপর থাকা এই মাটি তেমন বিপদজনক না হলেও বৃষ্টির পানিতে পাকা সড়কের ওপর পড়ে থাকা ওই মাটিগুলো কাঁদা হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়। এতে করে এই সব সড়কের চলাচল করা মোটরসাইকেল, বড় বড় ট্রাকসহ সকল প্রকারের যানবাহনের চাকা পিছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া অংশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাটির প্রলেপ জমেছে। গত কয়েক মাস ধরে ইটভাটার জন্য ট্রাকে পরিবহনের সময় সড়কে এঁটেল কাঁদামাটি পড়ে সড়ক এখন কাদা সড়কে পরিণত হয়েছে। পথচারীরা সড়কে চলাচল করতে পারছে না। বিশেষত দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন মোটরসাইকেল চালকেরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। সড়কের পাশের লোকজন ও ব্যবসায়ীদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। ইটভাটার ট্রাকের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত বহন করা মাটি সড়কে পড়ে। বেশ কিছুদিন ধরে ধুলায় টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছিল। এখন বৃষ্টি হওয়াতে পাকা সড়কগুলো কাদাময় হয়ে পড়েছে। চলাচলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে বেড়েছে দুর্ভোগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৌলভীর দোকান, নয়াখাল, আন্দার মা’র দরগাহ ও কেরানীহাট গরুর বাজার এলাকায় গাড়ি যানজটে আটকে পড়ায় বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা চালান। বেশ কয়েকটি যান পিচ্ছিল মহাসড়কে চালানোর চেষ্টা করলে পিছলে মহাসড়ক থেকে নিচে মাটিতে পড়ে যায়।

যাত্রী মো. আকিব বলেন, সড়কে মাটির প্রলেপ জমছে কয়েক মাস ধরে। সকালে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি হলে মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। যানজটের কারণে সাতকানিয়া থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে এক ঘণ্টার পরিবর্তে চার ঘণ্টা সময় লেগেছে।

কালিয়াইশের বাসিন্দা মো, দেলোয়ার হোসেন জানান, কেঁওচিয়া, তেমুহনী ও কালিয়াইশের বিল থেকে মাটি কেটে মহাসড়ক দিয়ে পরিবহন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমি জরুরি কাজে উপজেলা সদরে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। কাদায় সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় মৌলভীর দোকান থেকে পায়ে হেঁটে অনেক কষ্টে কেরানীহাট এসেছি।

বাস সুপারবাইজার এনামুল হক বলেন, মাটি পরিবহণের ফলে বৃষ্টিতে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় ৩ ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকা পড়েছি। চালাতে গিয়ে গাড়ি সড়ক থেকে নেমে যাচ্ছে। সড়ক দিয়ে মাটি পরিবহণ বন্ধ করা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে পিচ্ছিল মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে যানজটের দৃশ্য তুলে ধরে এক ভিডিও বার্তায় মাটি ব্যবসায়ীদের এক হাত নিলেন বান্দরবান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাফি চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘মাটি ব্যবসা করতেছেন ঠিক আছে। কিন্তু এ রাস্তা কারো বাপের না। রাস্তাটা ধ্বংস করে দিচ্ছেন। কেউ যাচ্ছে চাকরিতে। যারা দৈনিক চাকরি না করলে তারা তাদের পরিবার চালাতে পারবে না। কেউ যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য।’

পিচ্ছিল সড়কে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কোচিংয়ের কয়েকটি ক্লাস করতে পরেননি জানিয়ে তিনি বলেন, পড়ালেখার এই ক্ষতির দায় নেবে কে?

তাই এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এ শিক্ষার্থী।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ এরফান বলেন, সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলে মহসড়ক কাঁদায় পিচ্ছিল হয়ে যানবাহনসহ অন্যান্য গাড়ী একটু ধীরগতিতে চলেছে। ফলে কিছুক্ষণ যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.