এমন পহেলা বৈশাখ কি ভাবা যায়!

নয়ন দেব নাথ

পহেলা বৈশাখ মানে গান, কবিতা, নাচে বর্ষবরণ, রঙিন পোশাকে বৈশাখী সাজে হাজারো মানুষের সম্মিলন আর বর্ণিল শোভাযাত্রা। চট্টগ্রামবাসীর কাছে সেই উৎসবের প্রাণকেন্দ্র হল ডিসি হিল ও আশপাশের এলাকা।

বুধবার বঙ্গাব্দ ১৪২৮ এর প্রথম সকালে ডিসি হিলে গিয়ে মিললো না তার কিছুই। মুখে মাস্ক পড়া হাতেগোনা কয়েকজনকে দেখা গেল সামনের সড়ক দিয়ে পথ চলছেন। এখন যে মহামারীর দিন!

শুধু ডিসি হিল এলাকা নয়, পহেল বৈশাখে নগরজুড়ে থাকত উৎসবের রঙ, আনন্দে মাতোয়ারা হত পুরো চট্টগ্রাম মহানগর।

সিআরবি শিরিষ তলা, জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বর, চট্টেশ্বরী সড়কসহ যেসব জায়গায় বৈশাখের প্রথম দিনে আনন্দ আয়োজনে মানুষের ঢল নামতো, সব জায়গা এখন খাঁ খাঁ।

করোনাভাইরাসের মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জনসমাগম এড়িয়ে সবাইকে থাকতে হবে ঘরে। বিপদ কমানোর এই একটাই পথ।

সেজন্য সরকার এবার বর্ষবরণের সব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। সবাইকে বলা হয়েছে ঘরে থেকে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে।

উৎসবহীন এই নববর্ষে ঘরবন্দি মানুষের প্রত্যাশা, নতুন বছরে বিপদ কেটে যাক, অবরুদ্ধ দশা থেকে দ্রুত মুক্তি মিলুক, এমন দিন আর কখনও না আসুক।

চট্টগ্রামের সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ গত ৪৩ বছর ধরে ডিসি হিলে আয়োজন করে আসছিল বাংলা নতুন বছরের বরণ ও বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানের। এর মধ্যে গত ৪০ বছরের আয়োজনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন নাট্যকর্মী আহমেদ ইকবাল হায়দার। বৈশাখ উদযাপন পরিষদের গত কমিটির আহ্বায়ক তিনি।

তিনি বলেন, “ডিসি হিলের পাশে লাভ লেইনে আমার বাসা। ১৯৭৭ সাল থেকে ডিসি হিলে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণের আয়োজন আমি দেখে এসেছি। কখনো এ অনুষ্ঠান হয়নি- এমন হয়নি।”

সেই আয়োজনে এবার ছেদ পড়ায় মন খারাপ আহমেদ ইকবাল হায়দারের। তবে মানুষের মঙ্গলের দিকটিই তিনি আগে দেখতে চান।
“নতুন বছরের আগমনী আমরা নিজেদের মধ্যেই ভাবলাম। নববর্ষের প্রার্থনা এটাই হোক- এ কঠিন সময় যেন আমরা দ্রুত পার করতে পারি। আমরা সকলেই মানসিকভাবে একে অপরের পাশে আছি ভেবে নিয়ে নতুন বছরকে ঘরে থেকেই বরণ করব।’’

নগরীর ডিসি হিল এলাকায় জয়সেন দাশ, বললেন, অন্য বছর পহেলা বৈশাখে তার সকাল হত ডিসি হিল থেকে ভেসে আসা গানের সুরে।

“কিন্তু এবার শুধু ডিসি হিল কেন, কোথাও কোনো আয়োজন নেই। নতুন বছরের এমন সকাল কল্পনাও করা যায় না।… এই কঠিন সময় আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব, সেটাই এখন প্রত্যাশা।”

নগরীর সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ে সিআরবি শিরিষ তলায় বর্ষবিদায় ও বাংলা নতুন বছরকে বরণে দুই দিনের উৎসব হয়ে আসছিল গত এক যুগ ধরে। ত্রয়োদশ বছরে এসে তা থমকে গেছে করোনাভাইরাসের কারণে।

বুধবার সকালে শিরিষ তলায় গিয়ে দেখা যায় নির্জন চারদিন। শিরিষ গাছের নিচে অনুষ্ঠানের স্থায়ী মঞ্চ থাকলেও নেই কোনো আয়োজন।

“আমরা এ পরিস্থিতিতে মনো যাতনায় ভুগগে চাই না। নানা বাধার মুখে অনেক কিছুইতো করতে পারি না। এবারে যে শক্তি, সেটি অদৃশ্য। তার বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র হচ্ছে ঘরে থাকা।”

এবার না হলেও আগামীতে আবার মানুষের মেলা জমবে- নতুন বছরের শুরুতে এ প্রত্যাশা রেখে তিনি বলেন, “একাত্তরে নানা সংকটের মধ্যে আমরা ছিলাম। তা কাটিয়ে উঠেছি। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও আমাদের জিততে হবে। এ আঁধার কেটে যাবে।”

“এমন দিন আমরা কখনোই চাই না। দুর্যোগকালীন সময়ে এবার পহেলা বৈশাখের আয়োজন নেই। আমাদের নিয়ম-কানুনগুলো মানতে হবে, আর সেটা সবার স্বার্থেই।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.