চট্টগ্রাম রেঞ্জের নতুন ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) নুরে আলম মিনা। চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেনকে পুলিশ সদর দপ্তরে উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে এ বদলি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনের সই করেন উপসচিব সিরাজাম মুনিরা।
নূরে আলম মিনা ২০২০ সালে পুলিশ সুপার থেকে উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি নিয়ে চট্টগ্রাম ছাড়েন।
চট্টগ্রামে এসপি থাকাকালীন ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ সীতাকুণ্ডে মৃত্যু পরোয়ানা না করে দেশে প্রথম জঙ্গি বিরোধী অভিযান ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’ এর নেতৃত্ব দেন নূরে আলম মিনা। অভিযানে জঙ্গিদের ছোড়া বোমা ও গ্রেনেডে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। সেবার তিনি জঙ্গি আস্তানা থেকে ২১ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। টানা চারদিন ধরে চলা ওই অভিযানে সুইসাইডাল ভেস্ট শরীরে বেঁধে জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে পাঁচ জঙ্গির মৃত্যু হয়। উদ্ধার করা হয় ১০টি গ্রেনেড, ০৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৩২টি গ্রেনেড তৈরীর ডাইস, ২৮টি গ্রেনেড তৈরী ডাইসের ঢাকনাসহ বিপুল বিস্ফোরক সরঞ্জাম।
নুরে আলম মিনা ১৯৭৬ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ হতে বিএসএস (সম্মান) ও এমএসএস সমাপ্ত করে ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০১ সালে বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন।
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদা ও রাজশাহী থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ২০০২ সাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি ও মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া সার্কেল পদে সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে রেলওয়ে জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী জেলা ও ডিএমপি এডিসি (রমনা বিভাগ), কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলায় দায়িত্ব পালন করেন।
২০১২ সালে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি সুনামগঞ্জ জেলায় এবং ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত সিলেট জেলার পুলিশ সুপার পদে ছিলেন। এরপর চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার থেকে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় ঢাকায় অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্বরত আছেন।
নুরে আলম মিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর দারফুর, সুদান মিশনে দায়িত্ব পালনকালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদকপ্রাপ্ত হন। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ‘বেস্ট-ইন-একাডেমিক্স’ পদকে ভূষিত হন। বাংলাদেশ পুলিশে তার অসাধারণ দায়িত্ব পালনের জন্য ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা, ২০১৪ সালে ‘আইজিপি ব্যাজ’ এবং ২০১৮ সালে জঙ্গি দমনে অসীম সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)- সাহসিকতা পদক লাভ করেন। ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজারবাগ প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সেবা, কর্মদক্ষতা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ পদক গ্রহণ করেন।