চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রবীণ আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কামাল উদ্দিন আহাম্মদ মারা গেছেন। দেশ-বিদেশ তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) রাতে নগরীর লালখান বাজারে নিজ বাসায় হৃদেরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রয়াতের নিকটজন দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু সারাবাংলাকে জানান, ৮০ বছর বয়সী কামাল উদ্দিন আহাম্মদ হৃদরোগে ভুগছিলেন। বাসায় টেলিভিশন দেখার সময় আকস্মিকভাবে তার হার্ট অ্যাটাক হয়। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
কামাল উদ্দিন আহাম্মদের বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায়। ষাটের দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা কামাল প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলেন। তার বড় বোন নুরুন্নাহার আঙ্গুর মুক্তিযুদ্ধের সময় সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রী ছিলেন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কামাল উদ্দিন আহাম্মদকে চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব দেয়া হয়। পিপি হিসেবে মহানগর দায়রা জজ আদালতে তিনি চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা পরিচালনা করেন, যে মামলাটি নানা নাটকীয়তা পেরিয়ে পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গতি পেয়েছিল এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আসামি হয়েছিলেন।
২০১৪ সালে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় ঘোষণার পরের বছর কামাল উদ্দিন আহাম্মদ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান।
প্রবীণ আইনজীবী কামাল উদ্দিন আহাম্মদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য দেশ ও জাতি তাকে সবসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
শোক বিবৃতিতে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘কামাল উদ্দিন আহাম্মদ শুধু একজন বিদগ্ধ আইনজ্ঞই নন, তিনি এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন ছাত্রনেতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। আমৃত্যু তিনি দেশ ও জাতির জন্য কাজ করে গেছেন। আইনজীবী হিসেবে তিনি আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন।’
‘তার ক্ষুরধার ভূমিকার কারণে জাতি জানতে পেরেছে, কিভাবে একটি স্বাধীন দেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল বিএনপি-জামাত জোট সরকার। যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মালিকানাধীন জাহাজে করে অস্ত্র এনে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম পরিচালনায় মদদের চাঞ্চল্যকর তথ্য তিনি উন্মোচন করেছিলেন। তার এই ভূমিকার জন্য তিনি দেশ ও জাতিকে ঋণী করে গেছেন
নওফেল আরও বলেন, ‘কামাল উদ্দিন আহাম্মদের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একজন নিষ্ঠাবান সংগঠককে হারিয়েছে বলে আমি মনে করি।’
এদিকে কামাল উদ্দিন আহাম্মদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাহসের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এ জন্য তিনি সাহসিকতার প্রতীক হয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। কঠিন সময়ে স্থির সংকল্পে কাজ করে যাওয়ার যে চর্চা তিনি আমৃত্যু করেছেন, তা তরুণ আওয়ামী লীগ কর্মীদের পথ দেখাবে।’
জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, জোহরের নামাজের পর আদালত প্রাঙ্গনে কামাল উদ্দিন আহাম্মদের প্রথম দফা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাদ আসর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে তাকে চৈতন্যগলি কবরস্থানে দাফন করা হবে।