চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারীর জোবরা গ্রামে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
শাটলের ক্যাম্পাস হিসেবেও পরিচিত চবি।
১৯৮০ সালে চালু হওয়া শাটল ট্রেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান পরিবহন। বর্তমানে পৃথিবীর একমাত্র শাটল ট্রেনের ক্যাম্পাসও এটি। চারটি বিভাগ, ৭ জন শিক্ষক ও ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৯টি অনুষদে ৪৮টি বিভাগ, ৬টি ইনস্টিটিউট, প্রায় এক হাজার শিক্ষক ও প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী আছেন। কর্মকর্তা কর্মচারী আছেন ২ হাজারের বেশি।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আছে ১৪টি আবাসিক হল ও ছাত্রাবাস রয়েছে। শহরের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন বাসা ও কটেজে থাকছে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী।
দেশের অন্যতম এ বিদ্যাপীঠ জন্ম দিয়েছে অনেক গুণীজনের। বরেণ্য মনীষীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে এ ক্যাম্পাস। উপমহাদেশের খ্যাতিমান ভৌতবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবুল ফজল, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সৈয়দ আলী আহসান, মুর্তজা বশীর, ঢালী আল মামুন, সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মান্নানসহ বহু কীর্তিমান মনীষী জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
চবি শিক্ষক ড. মো. শাহাদাত হোসেনের নতুন মাছের প্রজাতি শনাক্ত করা এবং প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী রক্ষা ও গবেষণায় অবদানের জন্য শিক্ষক মনজুরুল কিবরিয়া পেয়েছেন দেশি-বিদেশি সম্মাননা। ড. শেখ আফতাব উদ্দিনের কম খরচে সমুদ্র পানি সুপেয় করার পদ্ধতি আবিষ্কার, ড. আল আমিনের লেখা বই যুক্তরাষ্ট্রের ৬টি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেফারেন্স বুক হিসেবে নির্বাচন, অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান চৌধুরীর বঙ্গোপসাগর নিয়ে মানচিত্র তৈরিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক নিজ নিজ ক্ষেত্রে রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর।
পিছিয়ে নেই শিক্ষার্থীরাও। ব্যাঙের নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করে সর্বকনিষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সাজিদ আলী হাওলাদার, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে চবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র শাখাওয়াত হাসান ও তার দলের নাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সিটি করপোরেশন মেয়র, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১১ জন সচিব ও ৩০ জন অতিরিক্ত সচিব পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চবি শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও চবির সাবেক শিক্ষার্থী।
দেশের ক্রান্তিকালেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধেই শহীদ হয়েছিলেন চবির ১৫ জন।
দেশের অন্যতম এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান মল্লিক। বর্তমানে ১৮তম ও প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। ৫৭ বছরে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র চারবার।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকালে আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্ত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষ হবে।