চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) উপাচার্য ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে সমাধানে ৭দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল রোববার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে ৭দিনের এ আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষক সমিতি। এর আগে বেলা ১১টায় নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৬টি দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি। তবে শিক্ষক সমিতির এ সকল কর্মকাণ্ডকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ দিয়েছে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির চারজন সদস্য।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আবদুল হক বলেন, শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি বর্তমান উপাচার্য ও উপ–উপাচার্য কৌশলে উপেক্ষা করে এসেছেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এসব দাবি বাস্তবায়ন না করায় আমরা বাধ্য হয়ে হয়েছি দেশের এই নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেই কর্মসূচি দিতে। প্রশাসন বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ’৭৩ এর আইনকে অমান্য করেছে। তিনি সিন্ডিকেটকে একটি পর্ষদে পরিণত করেছে ফেলেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারসাম্যহীন একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ’৭৩ এর আইনকে অমান্য করেছেন।

সভাপতি প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, আমরা প্রশাসনের নিকট যতগুলো দাবি দিয়েছি প্রশাসন আমাদের প্রতিটি দাবি কৌশলে উপেক্ষা করে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের মতো অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতিকে প্রোগ্রামের আগেরদিন দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। অথচ অনুষ্ঠানে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ খুবই নগন্য। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আবেগ জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। কিন্তু প্রশাসন এই দিবস উদযাপনের আগে থেকে শিক্ষক সমিতিকে কোনো কিছু জানায়নি। এভাবেই প্রতিনিয়ত শিক্ষক সমিতিকে অমর্যাদা করছে। তিনি আসলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার সক্ষমতা হারিয়েছেন। উনার নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে গেছে। তাই শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের মতো একটি অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং নেতৃত্বের দুর্বলতা থাকায় শিক্ষকগণ তার সাথে অংশগ্রহণ করতে চান না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সহ–সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলা উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলী আরশাদ চৌধুরী, সদস্য ড. মোহাম্মদ শেখ সাদী ও প্রফেসর ড. লায়লা খালেদা ও হলুদ দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. সেকান্দর চৌধুরী।

দাবিগুলো হলো, অতিসত্বর সিন্ডিকেটে ডিন, প্রভোস্ট এবং একাডেমিক কাউন্সিলসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন দিতে হবে, শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অডিও কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে নিয়োগ–বাণিজ্য চক্রের সাথে যুক্তদের খুঁজে বের করতে হবে, শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বোর্ডে সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ইনস্টিটিউটের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন অনেক প্রশাসন–ঘনিষ্ট শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী বোর্ড পুনর্গঠন করতে হবে, পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কিত এ সকল নির্বাচনী বোর্ড কর্তৃক বিভিন্ন বিভাগে স্থায়ী/অস্থায়ী ভিত্তিতে গণহারে শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে এবং সকল অবৈধ নিয়োগ বাতিল করতে হবে, সিন্ডিকেট সভায় ‘নির্বাচনী বোর্ড বা সিন্ডিকেট প্রয়োজন মনে করলে বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত নিয়োগ দিতে পারবে’ মর্মে গৃহীত রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিপন্থী ও বেআইনি সিদ্ধান্ত অতিসত্বর বাতিল করতে হবে, সিন্ডিকেট সভায় বিভাগ থেকে চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃত এ সকল প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপককে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই স্থায়ী করা যাবে’ মর্মে গৃহীত বেআইনি এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্ট পরিপন্থী সিদ্ধান্ত অতিসত্বর বাতিল করতে হবে, নির্বাচনী বোর্ড বা বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সদস্য হিসেবে মিথ্যার আশ্রয়গ্রহণ, স্বীকৃত ও মানসম্পন্ন জার্নালের প্রকাশনাকে অস্বীকার ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষকগণের পদোন্নতিতে অন্যায়ভাবে বাধা সৃষ্টিকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রত জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং অতিসত্বর ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিয়ে আবেদনের তারিখ থেকে কার্যকর করতে হবে, সম্মানিত শিক্ষকগণকে অযাচিত হয়রানি থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে সহকারী অধ্যাপকের ন্যায় সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে পদোন্নতি আবেদনের তারিখ থেকে কার্যকর করতে হবে ও পালি বিভাগের সভাপতি শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপন এবং ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর আবদুল হকের বিরুদ্ধে গঠিত হয়রানিমূলক তদন্ত কমিটি অতিসত্বর বাতিল করতে হবে ইত্যাদি।

চার সদস্যের প্রতিবাদ : তবে শিক্ষক সমিতির এ সকল দাবিকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ দিয়েছে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির চারজন সদস্য। খোদ সমিতির বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে তাদের দাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ‘মিথ্যাচারের শামিল’। সমিতির ১১ সদস্য বিশিষ্ট বর্তমান কমিটিতে ৪ জন সদস্যের দাবি শিক্ষক সমিতির সামপ্রতিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন শিক্ষককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বিবৃতি প্রদান, বিভিন্ন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারসহ অসংখ্য কর্মকাণ্ড শিক্ষক সমিতির ৩০ ভাগ সদস্যকে না জানিয়ে, কোনো রকম অবহিত না করে, কোনো বিস্তারিত সভায় আলোচনা না করে শীর্ষ নেতাদের স্বাক্ষর নিয়ে করা হয়েছে।

সমিতির সামপ্রতিক কর্মকাণ্ডের কোনো দায়ভার এই চারজন শিক্ষক নিবেন না বলে গতকাল রোববার শিক্ষক সমিতির সদস্য প্রফেসর ড. রকিবা নবী ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলমের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এছাড়া এতে সম্মতি দিয়েছেন সমিতির যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. আদনান মান্নান ও সদস্য প্রফেসর ড. মো. দানেশ মিয়া।

শিক্ষক সমিতির এ সকল কর্মকাণ্ডকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যায়িত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষকদের বিব্রত করা কোনোভাবেই শিক্ষক সমিতির কর্মপিরিধির মধ্যে পড়ে না। আমাদের সকল সম্মানিত সহকর্মীর সাথে আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দুর্নীতি কিংবা ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের বিরোধী অথবা গণতন্ত্রের ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড হলে অবশ্যই আমরা তার প্রতিবাদ করবো। কিন্তু ৩০ ভাগ সদস্যকে কোনো কিছু না জানিয়ে, উপেক্ষা করে কোনোরকম প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত আমাদের হতবাক ও হতাশ করেছে।