দুই প্রার্থীর আচরণে কোনঠাসা অন্য প্রার্থীরা:চট্টগ্রাম ১৫

সৈয়দ আককাস উদদীন 

সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে সাতজন প্রার্থী থাকলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারণা গণসংযোগ চলছে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের দুই প্রার্থীর লড়াই। তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে বাকি পাঁচজন প্রার্থী। হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর প্রভাব প্রচারণায় এবং তাদের গণসংযোগের আচরণে নিজেদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান অন্য প্রার্থীরা।

২রা জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুরে একটি সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক জোটের প্রার্থী আলহাজ্ব জসিম উদদীন।

চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাতজন প্রার্থী’রা হলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মুহাম্মদ আলী হোসাইন মোমবাতি প্রতীক,বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মনোনীত প্রার্থী মুহাম্মদ সোলাইমান কাসেমী হাতঘড়ি প্রতীক,জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ ছালেম লাঙ্গল প্রতীক,ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ হারুন মিনার প্রতীক,বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী মোঃ জসিম উদ্দিন ছড়ি প্রতীক।

আসনটি থেকে সাতজন প্রার্থী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে পাল্টাপাল্টি হামলা অভিযোগে তুমুল লড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড. প্রফেসর আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি। রাজনীতিতে আগে থেকেই বিরোধ চলে আসছে উভয়ের মধ্যে। সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে রুপ নেয়।মনোনয়ন ফরম জমা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রে চলে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান। এরমধ্যে টানা তৃতীয় বার নৌকা নিয়ে হ্যাট্টিক করতে মনোনয়ন পেলেও হাল ছাড়েনি এম এ মোতালেব সিআইপি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে মনোনয়ন না পেলেও নাগরিক কমিটির ব্যানারে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন তিনি। এদিকে উপজেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি হয়েও নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করায় নদভীর সমর্থকেরা তার পদত্যাগ দাবি করলেও মোতালেবের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ নির্বাচনের টার্গেট বাস্তবায়ন করতেই দলীয় নির্দেশনা মেনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এম এ মোতালেব নির্বাচন করছেন। কাজে পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। পাল্টাপাল্টি অবস্থানে উভয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ,পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলনও করেন।

নদভী মোতালেবের এ লড়াইয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। উভয়ের দাবি তাদের সাথেই রয়েছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীবৃন্দ।এদিকে বিভক্তের বেড়াজালে হিমশিম খেয়ে কোনদিকে নিজেদের প্রকাশ্য অবস্থান প্রকাশ করতে পারছেন না বলে জানান আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। এদিকে নৌকা ঈগলের তুমুল লড়াইয়ে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে বাকি প্রার্থীরা। অনেকেই হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর তুমুল লড়াইয়েও পেরে উঠতে পারছেন না বলেও জানান।

ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মুহাম্মদ আলী হুসাইন জানান, প্রচারণা কম হচ্ছে এটা ঠিক আছে তবে শেষের দিকে করবো।পোস্টার লাগাচ্ছি বিভিন্ন জায়গায় ছিঁড়ে ফেলছে। ওদের দুই প্রার্থীর যে কর্মকাণ্ড মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছেন। পোস্টার ছেঁড়ার বিষয়ে কোন অভিযোগ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোহাগাড়া সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে বলেছি তবে লিখিত কোন অভিযোগ করা হয়নি।

এদিকে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকার বিষয়টির জবাবে কল্যাণ পার্টির মনোনীত হাতঘড়ি প্রতীকের সোলাইমান কাসেমী বলেন, আমি যেভাবে প্রচারণা করতেছি অন্য কোন প্রার্থী সেভাবে প্রচারণা করছে না।নৌকা আর স্বতন্ত্র প্রার্থী বড় প্রার্থী হওয়ায় ওদেরটা চোখে বেশি পড়ছে।কল্যাণ পার্টি থেকে আসনটিতে আমি প্রথম নির্বাচন করতেছি। পেশিশক্তি কালো টাকার ব্যবহার না হলে আমি শতভাগ বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ ছালেম বলেন, আমরা আরম্ভ করতেছি। এখন জোড়ালো ভাবে সব আরম্ভ করতেছি।

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী জসীম উদ্দিন বলেন, পোস্টার লাগাচ্ছি এমনি।ওরা তো বড় দল আমরা তো ছোটদল।আমাদের প্রচারণা আমরা করতেছি।ওদের সাথে তো পেরে উঠতে পারছি না।আমরা পাড়ায় পাড়ায় যাচ্ছি,আমাদের মত আমরা ক্যাম্পিং করতেছি। ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ হারুনকে একাধিক কল করা হলেও গ্রহণ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাইরে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রচার-প্রচারণা বা গণসংযোগ নেই। এমনকি নির্বাচনী অফিসও কোথাও চোখে পড়েনি। এই প্রার্থীদের সম্পর্কে দুই উপজেলার মানুষের কোন ধরনের ধারণা নেই বললেই চলে। এই আসনের ভোটার’রা জানা, তারা এমনিতেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। মূলত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আবু রেজা নদভীর নৌকা ও আবদুল মোতালেব এর ঈগল প্রতীকের মধ্যে।

এদিকে নির্বাচন বর্জন করতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেবের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে উপজেলা বিএনপির তিন আহবায়ক কমিটির সদস্যকে বহিষ্কার করেছে দলটি।

সাতকানিয়া নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া বাকিদের বিষয়ে কোন ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ হয়নি।

লোহাগাড়া নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইনামুল হাছান বলেন, আমাদের কাজই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া।আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজই হচ্ছে এখন এটা।সকল প্রার্থীদের সাথে কথা বলেছি কারো কোন সমস্যা নেই।পাশাপাশি মিলেমিশে কাজ করার জন্যও সকলকে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্যঃ সাতকানিয়া উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা এবং লোহাগাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন মিলে গঠিত চট্টগ্রাম-১৫ আসন। এবার মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪১১ জন। এই আসনে টানা দুবারের (২০১৪ ও ২০১৮) সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভী। ২০০৮ সালে এই আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আ ন ম শামসুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ সেবার তৃতীয় হয়েছিল। এলডিপির অলি আহমদ ছাতা প্রতীক নিয়ে সেবার দ্বিতীয় হয়েছিলেন। এ ছাড়া এই আসনে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামী জয়ী হয়। আর ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে জেতেন অলি আহমদ।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.