পরিবার পাশে না দাঁড়ালেও ডিসির নির্দেশে পাশে দাঁড়িয়েছেন ইউএনও মিল্টন

 

সৈয়দ আককাস উদদীন

দুবাইফেরত অসুস্থ স্বামীকে ঘরে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন স্ত্রী। পরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম কর্মকর্তারা তাকে রিসিভ করে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাড়ি আনার পর তাকে আর্থিক ও খাবার দিয়ে সহায়তা করছেন স্থানীয় ইউএনও।

১৮ই মার্চ (সোমবার)সাতকানিয়ার চরতীতে গেলে স্থানীয়রা এমন তথ্য জানান গণমাধ্যমে।

জানা গেছে, গত ১২ মার্চ দিবাগত রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকার শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেন উপজেলার চরতি ইউনিয়নের ৫০ বছর বয়সী নুরুল আমিন। পুলিশের সহায়তায় হুইলচেয়ারে করে বিমান থেকে নেমে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অফিসে গিয়ে পুলিশের সহায়তায় বাড়িতে স্ত্রীকে ফোন দেন তিনি। তবে স্ত্রী তাকে আনতে অপারগতা জানান। পরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম কর্মকর্তারা তাকে রিসিভ করে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার ঢাকার আশকোনায় রাখে।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে চট্টগ্রাম ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নুরুল ইসলামের উদ্যোগে চরতি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল আমিন ও ফিল্ড অর্গানাইজার নোবেল দাসের সহায়তায় নুরুল আমিনের পরিবারকে রাজি করানো হয়। এরপর ইউপি সদস্য ও দুবাই প্রবাসীর স্ত্রী জোসনা আক্তার বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় গিয়ে প্রবাসী নুরুল আমিনকে শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকালে নিজ বাড়ি নিয়ে আসেন।

পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজ শনিবার দুবাইফেরত প্রবাসীর বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তা ও এক মাসের খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেন।

ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস বলেন, মানবিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপাতত ১০০ কেজি চাউল, নগদ ২০ হাজার টাকা ও এক মাসের মুদি দোকানের বাজার দেওয়া হয়েছে। ইউএনও পরবর্তীতে ওই প্রবাসী ও তার সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস প্teন করা হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম চট্টগ্রামের ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর নুরুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, আপাতত দুবাইফেরত প্রবাসী নুরুল আমিনের চিকিৎসার সার্বিক ব্যয় আমরা বহন করব। সুস্থ হওয়ার পর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে উনি যাতে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের অভাব দূর করতে পারে সেজন্য ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করবে।

 

 

প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী জোসনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী ৮ মার্চ দেশে আসবে, এমন খবর তার এক রুমমেট ফোনে আমাকে জানায়। এরপর থেকে উনার (স্বামী) ফোন পায়নি। ১২ মার্চ দেশে এসে ফোন দিলে আমি পুলিশ সদস্যদের তাকে গাড়িতে তুলে দিতে বলি। আমি চট্টগ্রাম শহর ও কেরানীহাট থেকে তাকে রিসিভ করার কথা জানাই।

তিনি আরও বলেন, এখানে আমি স্বামীকে আনতে অস্বীকৃতি এবং অপারগতা দেখায়নি। আমার সন্তানরা ছোট হওয়ায় এবং আমি ঢাকা না চেনায় এ কথা বলেছি। আমার এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। ওনি না থাকলে আমার সংসারের অর্থের যোগান কে দিবে? এখানে আমার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

স্থানীয় চরতি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল আমিন এবং ওই প্রবাসীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ঋণ করে অবৈধ পথে দুবাই যান নুরুল আমিন। অবৈধ হওয়ায় সেখানে কোনো কাজ না পেয়ে পান বিক্রি শুরু করেন। তবে ওই পান বিক্রির টাকায় সংসারের ভরণপোষণ মেটানো ও ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। গত সপ্তাহে নুরুল আমিন দুবাই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এক সপ্তাহ জেল খাটেন। জেলেই তিনি হৃদরোগ ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.