চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জাহেদুল হকের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছেন পরিবারের দুই ভাই।
রবিবার (২৬ মে) বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। অভিযোগকারী দুই ভাই হলেন- বোয়ালখালীর শাকপুরা গ্রাম নিবাসী স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব মরহুম নুরুল হকের ৩য় পুত্র মো. নেছারুল হক ও ৪র্থ পুত্র মো. ছায়েদুল হক।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, আমাদের পিতা মোহাম্মদ নুরুল হক ধর্মপ্রাণ, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন। তাঁর একক অর্থায়নে বোয়ালখালী হাজী মোহাম্মদ নুরুল হক ডিগ্রী কলেজ, কমর আলী সওদাগর জামে মসজিদ, আমিনিয়া ফোরকিয়া নুরিয়া এতিমখানা ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা এবং চট্টগ্রাম শহর দেওয়ান বাজার এলাকায় বায়তুল নুর জামে মসজিদ স্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি আরো বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অবদান রেখেছেন, তিনি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের স্পন্সর ডিরেক্টর ছিলেন। তারা বলেন, ১৯৮২ সালে আমাদের পিতা মরহুম নুরুল হক সওদাগর পশ্চিম শাকপুরায় আমিনিয়া সুরকিয়া নুরিয়া এতিমখানা ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
আমাদের পিতা ২০০১ সালে পাঁচ পুত্র সন্তানকে নিয়ে (১. এনামুল হক, ২. চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদুল হক ৩. নেছারুল হক, ৪. ছায়েদুল হক, ৫. জসিমুল হক) ওয়াকফ- আল -আওলাদ দলিল সৃজন করেন। দলিল অনুসারে উক্ত মাদ্রাসাটির নামে ৫০ কাটা জায়গা ৫ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি দ্বিতল ভবন ও প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে একটি রান্নাঘর থাকার পরও তারা জোরপূর্বক ভাঁড়াটে লোকজন দিয়ে আরেকটি রান্নাঘর নির্মাণ করে আরো ৩০ কাঠা জায়গা দখল করার অপচেষ্টা চালায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদুল হক এবং অন্য ভাইয়েরা। উক্ত ঘটনায় আমরা ঐদিনই বোয়ালখালী থানায় আইনানুগ সহযোগিতা চাইতে গিয়ে অদৃশ্য কারণে সহযোগিতা পায়নি। এসময় থানা থেকে বের হয়ে প্রাইভেট কার যোগে শহরে যাওয়ার সময় কতিপয় ভাড়াটে সন্ত্রাসী আমাদের গাড়িকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, তখন রাত পৌনে ১২টা।
আমাদের প্রাইভেটকারটি শাকপুরা চৌমুহনী আসলে উপর্যুপরি পাথর নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীরা। চালকের সাহসিকতার কারণে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ওই স্থান অতিক্রম করতে চাইলে পেছন থেকে গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসী বাহিনী। সে যাত্রায় আমরা বেঁচে যাই। সম্মেলনে আরো জানান, ওয়াকফ আল আওলাদ দলিল অনুসারে চট্টগ্রামের পশ্চিম শাকপুরা গ্রামে বহুতল বিশিষ্ট ৭টি বিল্ডিং, অনেক লাল জমি ও জায়গার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে গিয়েছেন আমাদের মরহুম পিতা, বোয়ালখালীতে অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড শাকপুরার পুরো বিল্ডিংটি বর্ণিত জায়গায় নির্মিত। বোয়ালখালীর পশ্চিম সাকুরা গ্রামে ১৯৮২ সালে আমাদের পিতা মরহুম নুরুল হক সওদাগর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আমিনিয়া ফোরকিয়া নুরিয়া এতিমখানা ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ওমর আলী সওদাগর জামে মসজিদ কিভাবে পরিচালিত হবে এবং ব্যয়ভার নির্বাহ করা হবে তার সুস্পষ্টভাবে দলিলে উল্লেখ রয়েছে। ২০১৬ সালে মাদ্রাসাটির ব্যয়ভার বহনের জন্য নগদ সাড়ে ৭ কোটি টাকা জমা থাকলে বর্তমানে ঐ টাকা সুদসমেত এনামুল হক, চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদুল হক ও জসিমুল হক কুক্ষিগত করে রেখেছেন।
ওয়াকফ আল আওলাদ দলিলে উল্লেখিত সম্পত্তি থেকে প্রতিমাসে ভাড়া বাসা বাবদ আয় ১০ লক্ষ টাকা এই টাকাগুলো এনামুল হক জাহেদুল হক ও জসিমুল হক তিন ভাই মিলে ভোগ করছেন। বাসা ভাড়া ভোগ করার প্রমাণস্বরূপ ভাড়াটিয়াদের সাথে লিখিত চুক্তিপত্রের কপি সংযুক্ত আছে। আমাদের মরহুম পিতার ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত খাতুনগঞ্জে মেসার্স জাহেদ এন্ড ব্রাদার্সের ৪২ কোটি টাকা এনামুল হক, জাহেদুল হক ও জসিমুল হক আমার পিতার মৃত্যুর পরে আমি এবং আমার ভাইকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত করে তারা নিজেদের নামে করে নেন। যেই প্রতিষ্ঠান হতে আমাদের মরহুম পিতা সকল ধরনের ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করতেন।
আসন্ন বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার পিতার দ্বিতীয় পুত্র মোহাম্মদ জাহিদুল হক হেলিকপ্টার প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। দুঃখের বিষয় হচ্ছে তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রচারপত্রে আমাদের পিতা মরহুম নুরুল হক কতৃক প্রতিষ্ঠিত শাকপুরা আমিনিয়া ফারুকিয়া নুরিয়া হেফযখানা ও এতিমখানা মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রচার করছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যা আমাদের পিতা কর্তৃক সৃজিত ওয়াকফ আল আওলাদ দলিলের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং আমাদের মরহুম পিতার নির্দেশ অমান্য ও অশ্রদ্ধার শামিল।
তারাা আরো বলেন, বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা বলতে চাই মোহাম্মদ জাহিদুল হক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হেলিকপ্টার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি আমাদের মরহুম পিতার আদেশ অমান্য করে স্বেচ্ছাচারিতা করছেন ও আমাদের সম্পত্তি জোরপূর্বক ভোগ দখল করে যাচ্ছেন। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যার হাত থেকে পরিবারের সম্পত্তি রক্ষা হয় না তিনি কিভাবে জনগণের জানমাল রক্ষা করবেন? কিংবা সরকার কর্তৃক পদেয় সুযোগ-সুবিধা ফল কি জনগণ পাবেন? তা নিয়ে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান ও আশঙ্কায় রয়েছি। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের রিপোর্টে মো. জাহেদুল হক স্টান্ডার্ড ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও এনসিসি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ৭৩ কোটি ৭৫ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৭০ টাকা।
আসন্ন ২৯ মে অনুষ্ঠিতব্য বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আমাদের এবং আমাদের পরিবারের মাঝে ইতোমধ্যে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।