সৈয়দ আককাস উদদীন
সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইস সরোয়ার বাজার সংলগ্ন এলাকায় মহি উদ্দিন নামে এক যুবককে পি টি য়ে হ ত্যা করেছে
দু র্বৃ ত্ত রা।
নি হ ত যুবক উপজেলার ছদাহা ১নং ওয়ার্ডের সরদার পাড়া লম্বা কালুর বাড়ি আলি আহামদের ছেলে। পেশায় যাত্রী পিকাপ চালক। বিয়ে করেছেন ১৭দিন আগে।
গত রাত দশটার দিকে খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন পুলিশের সহায়তায় পরিত্যক্ত অবস্থায় নি হ ত মহি উদ্দিনের লা শ উদ্ধার করেন। ধারণা করা হচ্ছে তার গাড়ি ভাড়ায় নিয়ে পি টি য়ে হ ত্যা করা হয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত মহিউদ্দিন মৃত্যুর ১ঘন্টা আগে মহিউদদীন ঘাতকদের মোবাইল ফোন থেকে তার বোনের শশুর বাড়িতে কল করে তাকে বেদড়ক পিটাচ্ছে বলে কল করেন।
পরে বোনের শশুর বাড়ির লোকজন নিহত মহিউদ্দিনের বাড়িতে বিষয়টি জানালে -মহিউদ্দিনের মা বাবা তার আপন খালাত ভাই পার্শ্ববর্তী আজিজ ড্রাইভারকে বিষয়টি জানালে তাৎক্ষণিক আজিজ ড্রাইভার এসে বোনের শশুরবাড়িতে কল করা মোবাইল নং এ যোগাযোগ করেন, পরে আজিজ ড্রাইভার নিহত মহিউদ্দিন আর অপর প্রান্ত থেকে ফোন করা ব্যক্তির সাথে রাত ১১.৩৭মিনিটে ২.১৪সেকেন্ড কথা বলেন।
ওই কথার প্রতিত্তোরে জানানো হয়, উপজেলা আমিলাইশ সরোয়ার বাজারে এসে মহিউদ্দিনকে নিয়ে যেতে।
তখন আজিজ ড্রাইভার নিহত মহিউদ্দিন আর অপর প্রান্তের লোককে বলেন আমরা আধঘন্টার ভেতর আসতেছি।
পরে মহিউদ্দিন সিএনজি যোগে ফোনে কথা বলা ব্যক্তির কথামতো আমিলাইশ সরোয়ার বাজারে উপস্থিত হন।
উপস্থিত হয়ে আজিজ ড্রাইভার আরো ৯বার আগের একই নম্বরে কথা বল্লে অপর প্রান্তের ওই লোক আর ফোন ধরেননি।
ফোনে না পাওয়াতে সিএনজি নিয়ে পুরো আমিলাইশ সরোয়ার বাজারে আজিজ ড্রাইভাররা খোঁজাখুঁজি করেন মহিউদ্দিনকে,পরে বাজারের স্থানীয় দারোয়ান থেকে জানতে চাইলে, স্থানীয় দারোয়ান তখন আজিজ ড্রাইভারদের বলেন,সরোয়ার বাজারের দক্ষিণে বটতল এলাকার ওদিকে একজনকে কিছু লোক পিটাচ্ছে বলে শুনছি।
তখন আজিজ ড্রাইভাররা সিএনজি যোগে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায় ভাংচুর করা গাড়ীর পাশে ড্রাইভার মহিউদ্দিনের মৃত্যু দেহ।
পরে আজিজ ড্রাইভাররা সাতকানিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
এদিকে আজিজ ড্রাইভার আরো বলেন, নিহত মহিউদ্দিন জীবনে পান সিগারেটও খায়নি, এবং তার নামে থানায় কোন মামলা কিংবা অভিযোগ নেই।
এদিকে স্থানীয় ইসমাইল ড্রাইভার বলেন,এই ভাড়াটা নেয়ার জন্য মহিউদ্দিনকে ২/৩দিন ধরে বেশ কয়েকজন লোক মোবাইলে বিরক্ত করতেছে বলে আমরা শুনছি।
তবে মহিউদ্দিন গাড়ী নিয়ে কাল মাগরীবের সময় গেছে ঘটনাস্থলে।
মহিউদদীন ঘাতকদের যে মোবাইল থেকে আজিজ ড্রাইভারের সাথে কথা বলেছেন ওই নম্বরের ব্যক্তিকে পেলে সব বের হবে কে বা কারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
নিহত মহিউদ্দিনের মা রোকসানা আক্তার ও বোন ইয়াসমিন আক্তার প্রতিবেদককে বলেন,আমার ভাই বিয়ে করছে মাত্র ১৭দিন হচ্ছে যে তাকে কোন কারণ ছাড়াই ভাড়ার কথা বলে ডেকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।
অপরদিকে নিহত মহিউদ্দিনের স্ত্রী নতুন স্বামীর জন্য কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে যাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ছদাহার ১নং ওয়ার্ডের অর্ধশতাধিক স্থানীয়রা বলেন মহিউদ্দিনের স্বভাব চরিত্র খুবই ভালো সে ৫ওয়াক্ত নামাজ ও পড়েন।
সাতকানিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, চুরি করতে গিয়ে গাড়ীতে ধানও ওঠায় তারা।
পরে অন্যরা পালিয়ে গেলেও মহিউদদীন গাড়ীসহ নিয়ে ধরা খায়,গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়।
তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে গণপিটুনি কিংবা গণধোলাইয়ের ব্যাপারে আইন বলছে
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুযায়ী, চোর ধরা পড়লে তাকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করতেই হবে। আর এর ব্যতিক্রম করলে দন্ডবিধির ১৮৭ ধারা অনুযায়ী আপনাকে অনূর্ধ্ব ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে। অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা পুলিশের আইনগত দায়িত্ব। আর এ দায়িত্বে বাধা দেয়ার মতো কোনো অধিকার আপনার নেই। বরং এমন কোনো ব্যক্তিকে আপনি যদি আটকে রাখেন এবং পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা দেন, তবে আপনাকে দন্ডবিধির ১৮৬ ধারা অনুযায়ী অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০ টাকা জরিমানা বা দুই ধরনের দন্ডেই দন্ডিত হতে পারেন।
আটক রাখার পর যদি ওই ব্যক্তিকে পিটুনি বা ধোলাই দেন তবে কারাদন্ডে মেয়াদ বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে অনূর্ধ্ব তিন বছর এক মাসে। সঙ্গে অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানা তো থাকছেই। আঘাত করতে গিয়ে যদি গুরুতর আঘাত দিয়ে ফেলেন তবে ৩৩৪ ধারা দন্ডবিধি অনুযায়ী কারাদন্ডের মেয়াদ বাড়বে আরও এক বছর। আর অর্থদন্ড হবে অনূর্ধ্ব ২ হাজার টাকা। অবশ্য এ ক্ষেত্রেও কারাদন্ড ও অর্থদন্ড উভয় দন্ডেও দন্ডিত হতে পারেন। (দন্ডবিধি, ৩৩৫ ধারা)
যেই ব্যক্তির ওপর এভাবে আপনি হামলে পড়লেন তার মৃতু্য হলে, দন্ডবিধির ৩০৪ ধারার বিধান অনুযায়ী আপনার দশ বছর কারাদন্ড বা জরিমানা বা দুটি দন্ডই হতে পারে। আর যদি অপরাধীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মেরে ফেলার বিষয়টি প্রমাণিত হয় তবে দন্ড হল যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব দশ বছর মেয়াদের যে কোনো কারাদন্ড। তার সঙ্গে যে কোনো পরিমাণ জরিমানা তো থাকছেই। (৩০৪ ধারা দন্ডবিধি, প্রথম অংশ)।
গণপিটুনিতে যদি ওই ব্যক্তি নিহত হয় তবে তার দায় বর্তাবে অপরাধ সংঘটনকারী সব ব্যক্তির ওপর। কেননা আইনে ‘যৌথ দায়িত্বশীলতা’ বলে একটি নীতি আছে। সেখানে বলা হয়েছে, একই অভিপ্রায় নিয়ে একাধিক ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটন করলে, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি এমনভাবে দায়ী হবেন যেন তিনি নিজেই অপরাধটি করেছেন। তাই গণপিটুনিতে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে, সবাইকে সমভাবে এজন্য দায়ী করা যাবে। [৩৪ ধারা দন্ডবিধি]
কাজেই মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় জড়িত জনতার অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হলে সবারই নূ্যনতম দন্ড হওয়ার কথা ‘যাবজ্জীবন কারাদন্ড’। কিন্তু হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া এসব উৎসুক জনতা আদালতের আগেকার নজিরের দিকে তাকিয়ে মোটামুটি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, অভিযোগ-তদন্ত-বিচার-সাক্ষ্যের লম্বা পথ পেরিয়ে তাদের শাস্তি দেয়া এত সহজ নয়। কিন্তু কখনো না কখনো তো শুরু হতেই হবে। সেই লম্বা পথের পথচলা অন্তত এবার শুরু হোক।