আরাকান আর্মির ‘দখলে’ মংডু -বোঝাপড়ার সম্পর্কে জোর বিশ্লেষকদের

কক্সবাজার ও  টেকনাফ প্রতিনিধি 

বাংলাদেশ-সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ‘দখলে নেওয়া’র পর টেকনাফে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত তিন দিন টেকনাফ থেকে গোলার শব্দ পাওয়া না গেলেও আতঙ্ক কাটেনি সীমান্তবাসীর। এর মধ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বোঝাপড়ার সম্পর্ক তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। রোহিঙ্গাদের ফেরানো বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনায় জোর দিয়েছেন তারা।

এর আগে বুধবার মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। মংডুর অবস্থান বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তের কাছেই। শহরটি আরাকান আর্মির দখলে যাওয়া নিয়ে তাই বাংলাদেশে চলছে আলোচনা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জানতে চান, মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ হয়েছে কিনা। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থে যা করণীয়, তাই করব। এর লক্ষ্য হবে বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমি বারবারই বলে আসছি, সরাসরি আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। ঢাকায় না হলেও অন্য কোনো শহরে আলোচনা করা যেতে পারে। আরাকান আর্মি তো বটেই, সেখানে শক্তিশালী আরও অন্তত ১০টি সংগঠন আছে। তাদের সঙ্গেও আলোচনা দরকার।

তিনি আরও বলেন, গোষ্ঠীভিত্তিক বিভক্তির কারণে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব কোনো সময়ই পূর্ণাঙ্গ ছিল না। আমাদের নীতিনির্ধারকরা কেন শুধু নেপিদোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন, জানি না। আগে থেকেই বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী এলাকার গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়া উচিত ছিল। জানা দরকার ছিল– তাদের পরিকল্পনা কী। এতে বোঝা যেত, তারা কী ধরনের সম্পর্ক চাচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে তাদের কী চিন্তাভাবনা। কারণ আরাকান আর্মিই তো এখন আমাদের প্রতিবেশী হয়ে গেল। এটা নিয়ে খোলাখুলি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গেও আলোচনা করা উচিত।

প্রায় অভিন্ন মত নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরীর। তিনি বলেন, আরাকান আর্মির উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ স্থাপন করা উচিত। সেটা প্রকাশ্যে না হলেও সমস্যা নেই। আরাকান আর্মি আমাদের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নিলে এই যোগাযোগ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, রাখাইন হওয়ায় আরাকান আর্মি মূলত নিজ গোষ্ঠীর স্বার্থই দেখবে। তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চাইবে না। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এত বছরেও যেহেতু আমাদের আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি, তাই আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ শুরুটা জরুরি। সেই সঙ্গে সীমান্তে সতর্ক থাকতে হবে, যেন আমাদের এলাকায় সংঘাত ছড়িয়ে না পড়ে।

এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সীমান্তে বড় ধরনের উত্তেজনা নেই। বিজিবি প্রস্তুত। কোনো ধরনের উস্কানি এলে তারা প্রতিহত করবে।

নৌ চলাচল শুরু, বন্ধ আমদানি-রপ্তানি

আতঙ্ক থাকলেও এক দিন বন্ধ থাকার পর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল আবার শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দ্বীপে জরুরি পণ্য, সেবা এবং মেডিকেল ইমার্জেন্সির জন্য ছোট নৌযান চালুর কথা জানিয়েছেন টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দীন।

তবে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি। গত শনিবার থেকে মিয়ানমারের পণ্যবাহী কোনো ট্রলার ও জাহাজ স্থলবন্দরে আসেনি। এ ছাড়া মালপত্র খালাস করা কার্গো ট্রলার ও জাহাজ মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারছে না।

সরেজমিন গতকাল নাফ নদে আগের মতো দেখা যায়নি জেলেদের নৌকা। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলি বা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনেননি বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। তবে তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.