অনিয়ন্ত্রিত চীনা রকেটের গতিপথে নজর রাখছে মার্কিন মহাকাশ কমান্ড

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, কক্ষপথ থেকে পৃথিবীতে পুনঃপ্রবেশ করতে যাওয়া চীনা রকেটের অনিয়ন্ত্রিত অবশিষ্টাংশের গতিপথের দিকে নজর রাখছে মার্কিন মহাকাশ কমান্ড।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে উৎক্ষেপণ করা চীনা রকেটের ওই অবশিষ্টাংশ কয়েক দিনের মধ্যেই বায়ুম-ল অতিক্রম করে সমুদ্রে বা অন্য কোথাও আছড়ে পড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

গত ২৯ এপ্রিল ‘লং মার্চ ৫বি’ নামের রকেটটি চীনের হাইনান দ্বীপ থেকে তিয়ানহে মডিউল নিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
তিয়ানহে মডিউল চীনের নির্মাণাধীন স্থায়ী মহাকাশ স্টেশনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্টেশনটির তিন ক্রুর বসবাসের কোয়ার্টার এই মডিউলটিতে করেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের জন্য কক্ষপথে মোট ১১টি মিশন পরিচালনা করবে চীন। এর প্রথমটিতেই ‘লং মার্চ ৫বি’ রকেটে করে তিয়ানহে মডিউল কক্ষপথে পাঠানো হয়। মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বায়ুম-ল হয়ে রকেটটি ঠিক কোন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকবে তা ‘পুনঃপ্রবেশের কয়েক ঘণ্টার আগে ছাড়া বলা যাবে না,’ অনলাইনে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে মার্কিন স্পেস কমান্ড। শনিবার কোনো একটি সময় এটি পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে বলেও ধারণা দিয়েছে তারা। হাভার্ডভিত্তিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী জনাথন ম্যাকডোয়েল বুধবার জানিয়েছেন, বিপুল গতিতে বায়ুম-ল পেরোনোর সময় রকেটের সম্ভাব্য বিপজ্জনক অংশটি হয়তো পুড়ে যাওয়া এড়াতে পারবে, তবে পৃথিবীপৃষ্ঠের ৭০ শতাংশই যেহেতু সমুদ্র, তাই শেষ পর্যন্ত রকেটের অনিয়ন্ত্রিত অংশের যা-ই পৃথিবীতে আসুক, তার প্রায় পুরোটাই সমুদ্রে পড়বে বলে মনে হচ্ছে।

রকেটের কিছু কিছু টুকরো ভূমিতে পড়তে পারে, এমনকী ২০২০ সালের মে মাসের মতো জনবহুল কোনো এলাকায়ও পড়তে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
সেবার চীনের আরেকটি ‘লং মার্চ ৫বি’ রকেটের খ-াংশ আইভরি কোস্টে পড়েছিল; তখন কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাতে কেউই আঘাত পায়নি বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ম্যাকডোয়েল।

মার্কিন মহাকাশ কমান্ড জানিয়েছে, লস এঞ্জেলেসের ২৫৭ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে ভ্যানডেনবার্গ বিমান ঘাঁটিতে অবস্থিত তাদের ১৮ মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ স্কোয়াড্রন অনিয়ন্ত্রিত চীনা রকেটটির গতিপথে নজর রাখছে; কোন পথে এটি পৃথিবীতে প্রবেশ করবে, তা জানতে নিয়মিত আপডেট নিচ্ছে।
এই স্কোয়াড্রনটি মহাকাশে থাকা ২৭ হাজারের বেশি মনুষ্যনির্মিত বস্তুর গতিপথে নজর রাখে, যার বেশিরভাগই কক্ষপথের নিচের অংশে পৃথিবীর কাছাকাছি আছে বলে জানিয়েছে মহাকাশ কমান্ড।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম পিপলস ডেইলি’র ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে পশ্চিমা দেশগুলো রকেটটি ‘অনিয়ন্ত্রিত’ এবং এর কারণে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এমন ‘অহেতুক প্রচারণা’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে।

“পরিস্থিতি মোটেই আতঙ্কিত হওয়া মতো নয়,” মহাকাশখাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঊদ্ধৃত করে বলেছে তারা।
“এর বেশিরভাগ অংশই পৃথিবীতে পুনঃপ্রবেশের সময়ই পুড়ে যাবে; খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ ভূমিতে, মানুষের কার্যকলাপ থেকে অনেক দূরে কোনো এলাকায় বা সমুদ্রে পড়তে পারে,” অ্যারোস্পেস নলেজ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ওয়াং ইয়ানান এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি।
হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের সদস্য ম্যাকডোয়েল বলেছেন, পৃথিবীতে পুনঃপ্রবেশের পর রকেটের ২১ টন ওজনের অংশটি টুকরো টুকরো হয়ে এমনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে পারে, যেমনটা ছোট বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা যায়। ১০০ মাইল এলাকাজুড়ে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় এসব টুকরো পাওয়া যেতে পারে।

কক্ষপথে এখনকার অবস্থান অনুযায়ী রকেটটির ধ্বংসাবশেষ উত্তরের নিউ ইয়র্ক থেকে শুরু করে মাদ্রিদ, বেইজিং এমনকী দক্ষিণের চিলি বা নিউ জিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে বা এর মাঝামাঝি যে কোনো জায়গায় পড়তে পারে, ধারণা ম্যাকডোয়েলের।

১৯৭৯ সালের জুলাইয়ে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশ স্টেশন স্কাইল্যাবের বড় একটি খ- অস্ট্রেলিয়ায় আছড়ে পড়ার পর থেকে বেশিরভাগ দেশই তাদের মহাকাশযানের নকশা এমনভাবে করে যেন বড় ধরনের অনিয়ন্ত্রিত পুনঃপ্রবেশ এড়ানো যায়।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.