মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে জীবন ব্লাড ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাতকানিয়ায় মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অভিযোগ উঠেছে জীবন ব্লাড ব্যাংকের বিরুদ্ধে।

রোগী ও ডোনারদের হয়রানি ছাড়াও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্লাড ব্যাংক ও এর স্বেচ্ছাসেবকদেরও রীতিমতো গালিগালাজের মতো ন্যাক্কারজনক আচরণও করছে এই ব্লাড ব্যাংকটি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্ত সংগ্রহের সময় পাঁচটি সংক্রামক ভাইরাস যেমন এইডস, হেপাটাইটিস এ ও বি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস জীবাণু পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু, এই ব্লাড ব্যাংকে টাকা নিয়েও তা যথাযথভাবে না করে ভুয়া রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে নিম্নমানের ব্লাড ব্যাগ। এতে করে একবার ব্লাড নিতে এক ডোনারকে ২/৩ বার পুশ করতে হচ্ছে।

মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললেও এই ব্লাড ব্যাংকটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। এর ফলে যা ইচ্ছা তা-ই করে চলেছে ব্লাড ব্যাংকটি।

রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র বিধিমালা অনুযায়ী, একটি ব্লাড ব্যাংকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, একজন ডিউটি ডাক্তার ও একজন টেকনিশিয়ান থাকা বাধ্যতামূলক হলেও এই ব্লাড ব্যাংকটিতে তার ছিটেফোঁটাও নেই। কিছুদিন আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার পর এই ব্লাড ব্যাংকটি গত কিছুদিন যাবত কেরানীহাট আশশেফা হাসপাতালের সাথে মিলে ওই হাসপাতালেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আলাদা কার্যক্রম পরিচালনার সময় নমনীয় মনোভাব দেখালেও আশশেফা হাসপাতালের সাথে কার্যক্রম শুরু করার পর ব্লাড ব্যাংকটির আসল চরিত্র ফুটে উঠেছে। গলাকাটা ফি নিয়ে দেদারসে চালাচ্ছে রমরমা বাণিজ্য। ফলে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে ব্লাড নিতে হচ্ছে রোগীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক থ্যালাসেমিয়া শিশু রোগীর ভাই জানান, আমরা অন্যান্য হাসপাতালে যে টাকা দিয়ে ব্লাড নিয়ে থাকি এই ব্লাড ব্যাংকে তার দ্বিগুণ টাকা নেয়। ফলে সর্বশান্ত হতে হচ্ছে অসহায় রোগীদের।

বাজালিয়া এলাকার একজন জানান, তার ছেলেকে কিছুদিন আগে এই ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দেয়ার জন্য এনেছিলেন। কিন্তু টাকার কথা শুনে তিনি হতবাক।

ছদাহার একজন জানান, এই ব্লাড ব্যাংকে ব্লাডের কাজে আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়। যা রীতিমতো অনৈতিক।

অভিযোগ আছে, এই ব্লাড ব্যাংকে হিমোগ্লোবিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কেমিক্যাল নেই। পরীক্ষা ছাড়াই তারা ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে রক্ত পরিসঞ্চালন করছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বার বার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও লাইসেন্সবিহীন এসব ব্লাড ব্যাংক দমনে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।

অতিরিক্ত টাকা আদায় ও নিম্নমানের ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ করার বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৬ মে) স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাতকানিয়া ব্লাড ব্যাংকের এডমিন আব্দুর রহিম কথা বললে তাকে হেনস্তা করা হয়। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়ে খারাপ মন্তব্যও করেন। এ বিষয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। তারা এই ব্লাড ব্যাংকে ডোনার না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রক্তশূন্যতা ও নানান জটিল সমস্যা নিয়ে আশশেফা হাসপাতালে ভর্তি হন ষাটোর্ধ (৬৫) এক রোগী। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী শুক্রবার (৭ মে) রোগীকে রক্ত দিতে রোগীর স্বজন ডোনার ঠিক করে রক্ত দেয়ার জন্য। কিন্তু রক্ত দিতে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে।

স্বেচ্ছাসেবীরা আশশেফা হাসপাতালের ভাড়া দেয়া জীবন ব্লাড ব্যংকে রক্ত না দেয়ায় কথা জানালে রোগীর স্বজনরা অন্য হাসপাতাল থেকে রক্ত পরিসঞ্চালন করে নিয়ে আসতে চাইলে, রক্তের স্যাম্পল না দিয়ে বাধা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে দীর্ঘ তিন ঘন্টা যাবৎ রক্ত না পেয়ে চটপট করতে থাকে অসহায় রোগী। হাসপাতাল থেকে জানানো হয় তারা অন্য কোথাও থেকে ব্লাড নিতে দিবে না রোগীকে। নিতে হবে জীবন ব্লাড ব্যাংক থেকে।

ফলে এক প্রকার জীবন ব্লাড ব্যাংকের কাছে জিম্মি রোগীরা। এমন ঘটনায় অনেকেই বলছেন, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে জীবন ব্লাড ব্যাংক।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.