নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানা এলাকায় অবৈধ বালু মহালকে কেন্দ্র করে আধিপত্যের দ্বন্দ্বে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুটি ‘সন্ত্রাসী’ গ্রুপ। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন একপক্ষের চারজন। এদের মধ্যে দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।
শনিবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা সড়কের চন্দনপুরায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন—আবদুল্লাহ্ এবং মানিক। গুলিবিদ্ধ একজনের নাম রবিন অন্যজনের নাম জানা যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,শনিবার মধ্যরাত থেকেই কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় বালু মহালের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অবস্থান করছিলো সন্ত্রাসীদের দুটি গ্রুপ। এর মধ্যে চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলার নেতৃত্বে একটি প্রাইভেটকারে ছিলেন নিহত মানিক, আবদুল্লাহ, ইমন এবং রবিনসহ ৬ জন।
আরেকটি গ্রুপে খোরশেদ হাসানের নেতৃত্বে ছিলেন হাসান, রায়হানসহ আরও কয়েকজন। তাদের কাছে ছিল ভারী অস্ত্রশস্ত্র। মূলত রাউজান-রাঙ্গুনিয়া কেন্দ্রীক ‘ডন’ হিসেবেই পরিচিত তারা।
গোলাগুলির ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে থাকা একজন প্রত্যক্ষদর্শী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমি কয়েকজন বন্ধুসহ চন্দনপুরা মোড়ে চা পান করছিলাম। হঠাৎ করে দেখি একটি বাইকে তিনজন প্রাইভেটকারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছে। তার অদূরেই দাঁড়ানো ছিল একটি পুলিশের টহল গাড়ি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোটরসাইকেল আরোহীরা চলে যায়। আমরাও আকস্মিকতায় আরেকটি কুলিং কর্নারে আশ্রয় নিই। এরপর সেখানে দুজনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। প্রাইভেটকারের চালকের আসনে রক্ত ছড়ানো ছিল।’
জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত দুজন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের পায়ের রানে এবং অপরজন হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে দুজনেই শঙ্কামুক্ত আছেন।
এ বিষয়ে জানতে বাকলিয়া ও চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং নগর পুলিশের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
তবে নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার আমিরুল ইসলাম সিভয়েস২৪’কে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বালু মহালকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলার সাথে সন্ত্রাসী খোরশেদ, রায়হান এবং হাসানের গ্রুপের দ্বন্দ্ব ছিল। আজ (শনিবার) বাবলা গ্রুপ ৬ জন নিয়ে একটি প্রাইভেটকারে ছিল। চার-পাঁচটি মোটরসাইকেল নিয়ে খোরশেদ গ্রুপ তাদের রাজাখালী ব্রিজ থেকে ধাওয়া করে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক গোলাগুলি হয়েছে। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র ছিল।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘একপর্যায়ে চন্দনপুরা এলাকায় পুলিশের টহল গাড়ি দেখে সরোয়ার গ্রুপের একজন সাহায্য চাইতে যায়। এর মধ্যে মোটরসাইকেলে এসে অন্য গ্রুপ প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয় এবং গুলিবিদ্ধ হন আরও দুজন। ইমন নামে একজন পুলিশ হেফাজতে আছে। সরোয়ার বাবলা পলাতক।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, খোরশেদ গ্রুপ রাউজান-রাঙ্গুনিয়ার দিকে মুভ করেছে। আমরা চট্টগ্রামের সকল স্থানে চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশ দিয়েছি। বিশেষ করে হাটহাজারী এবং রাউজান রাঙ্গুনিয়া লাইনে। তাদেরকে আটক বা অস্ত্র উদ্ধার করা এখনো সম্ভব হয়নি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি জড়িতদের গ্রেপ্তারে।’
কে এই সারোয়ার হোসেন বাবলা
চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর এইট মার্ডার মামলার আসামি আসামি ‘শিবিরক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলী খানের একসময়ের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ সারোয়ার হোসেন বাবলা। তিনি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার খোন্দকার পাড়ার কালা মুন্সির বাড়ির আব্দুল কাদেরের ছেলে।
চার বছর জেল খেটে পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে পালিয়ে থাকা ‘বড়ভাই’ সাজ্জাদের দেখভালে ছিলেন দুবছর।
২০২০-এ দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার হন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পরে বের হয়ে চার বছর পালিয়ে ফের গ্রেপ্তার হন ২০২৪ সালের জুলাইয়ে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, নগরের ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামি থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ১৮টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সবগুলোতে জামিনে রয়েছেন তিনি।
সবশেষ গত বছরের ২৭ জুলাই সারোয়ারকে গ্রেপ্তার করেছিল চান্দগাঁও থানা পুলিশ। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আবারও জড়িয়ে পড়েন পুরোনো অপকর্মে।