নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে রাজিব জাফর চৌধুরীকে। যার মা-বাবা দু’জনই আওয়ামী লীগ নেতা। নতুন এই কমিটির তালিকা প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, ঘোষিত তালিকায় ২৯ নম্বরে রয়েছে রাজিব জাফর চৌধুরীর নাম। তার বাবা ২০০১ সালে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। তখন তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কো-চেয়ারম্যান। তিনি ২০১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন তা অনেকেই শেয়ার করছেন।
এছাড়া রাজীব জাফরের মাতা হাসিনা জাফরও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী। ২০১৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম-৩১ সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মহিলা কাউন্সিরল ও প্যানেল মেয়র-১ ছিলেন। পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ এই পরিবারকে আওয়ামী পরিবার হিসেবেই চেনে। এর মধ্যে হঠাৎ এই পরিবারের এক যুবকের নাম বিএনপির জেলা কমিটিতে আসায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন অনেকে। শুধু বিএনপি নয় অন্য রাজনীতিসচেতন মানুষও এতে তাজ্জব বনে যান।
এছাড়া নানান অপকর্ম বিতর্কিত কয়েকজন যুবকও কমিটিতে আসায় ক্ষোভ করেছেন অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘আসলে বিএনপিতে কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কিছু মানুষকে কমিটিতে লজ্জাবোধ করছি। এভাবে চলতে থাকলে দল সামনে এগোবে কীভাবে!
আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রাহী লিখেছেন, ‘৫৪ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছিলেন, ৫ আগস্টের আগেও দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। বাস্তবে দেখছি, ৫ আগস্টের পরের নেতাদেরকেই মূল্যায়ন করা হল।
এছাড়া রাজিব জাফরকে কেউ কখনো বিএনপি করতে দেখেনি। তার মা-বাবা দু’জনই আওয়ামী লীগের বড় নেতা। হঠাৎ করে তিনি কার ইশারায় বিএনপির কমিটিতে এলেন বুঝতে পারছি না।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়ার সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আজ আমি সারাদিন ম্যাডামের দেশে ফেরা উপলক্ষ্যে ঢাকায় ব্যস্ত ছিলাম। কমিটির তালিকা এখনো দেখিনি। তবে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত থাকে না। আমাদের দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি আছে। তারা যাচাই-বাছাই করে কমিটিগুলো করেন।’
রাজিব জাফর চৌধুরীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে মা-বাবা আওয়ামী লীগ করলেই যে সন্তান বিএনপি করতে পারবে না, তা কিন্তু নয়। হয়তো গোপনে দলের জন্য কাজ করেছেন। সেটা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ভালো জানবেন।’
এ বিষয়ে রাজিব জাফর চৌধুরীর বলেন আমি ২০০৭সাল থেকেই ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে পছন্দ করতাম, আর আমার বাবা জাফর আহমদ চৌধুরী আমার আর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরামর্শে তৎকালীন হাওয়া ভবনে মিটিং করার পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ত্যাগ করেন।
এবং আমার বাবাকে তখন একটি মার্কাও প্রদান করা হয় ট্রাক।
এখন স্থানীয়দের প্রশ্ন হচ্ছে হাওয়া ভবনের পরামর্শে এবং সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে দল ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগদান করলে তো প্রতীক ধানের শীষ দেয়ার কথা তাহলে ট্রাক প্রতীকে আসলো কেন?
এদিকে রাজীব জাফর আহমদ চৌধুরী তার মা হাসিনা জাফর সম্পর্কে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় সেটা স্বীকার করলেও গেল ২০২৪সালের আগষ্টের আগে পদত্যাগ করেছেন আওয়ামী লীগ থেকে সেটা বলেন,তবে পদত্যাগ করে কোন দলে যোগদান করলেন সেটা তিনি না বললেও ২০১৮সালে মা নৌকার মনোনয়ন ফরম তোলার কথা অকপটে স্বীকার করেন, অপরদিকে একই সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম ১৪-১৫ আসন থেকে ধানের শীষের মনোনয়ব প্রত্যাশী ছিলেন বলে জানান।
এবং ২০১৩সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালদা জিয়ার বাসভবনের বালুকান্ডে তার ভূমিকা ছিলো বলেও বলেন, তিনি আরো বলেন আমার বাসা আর ম্যাডামের বাসা লাগোয়া যার কারণে আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে ম্যাডাম চেনেন।
এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আমাদের বাসায় এসে আব্বার সাথে চা নাস্তাও করেছেন।
তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, ২০১৮সাল থেকে কেউ আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি তবে একটি চক্র উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এখন প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে।
জাফর আহমদ চৌধুরী পদত্যাগ করলে ২০১৫সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা শোক জানার কারণ কি?
এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেটা আসলে আওয়ামী লীগের বিষয়,আমার বাবার সাথে তো আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিজনেস ছিলো হয়তো তারা করছে।জাফর আহমদ চৌধুরীর পদত্যাগের সমর্থনে তিনি একটি তৎসময়ের ইংরেজি পত্রিকার কপি পাঠান প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপ এ।