পার্কভিউ হাসপাতালে অনিয়ম, অভিযান চলাকালে ম্যাজিস্ট্রেটকে সিভিল সার্জনের ‘হুমকি’

জরিমানা নয়, নেওয়া হয়েছে শুধু মুচলেকা

সময়ের কন্ঠস্বর ডেস্ক

চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম স্বনামধন্য বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান পার্কভিউ হাসপাতালে পরিচালিত এক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে চাঞ্চল্যকর মোড় নেয়, যখন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযানে হস্তক্ষেপ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এই ঘটনায় প্রশাসন ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুমা আক্তার কণার নেতৃত্বে পরিচালিত হয় অভিযানটি। পার্কভিউ হাসপাতালের রান্নাঘর ও খাবার সংরক্ষণের স্থানে পরিদর্শনের সময় পাওয়া যায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, রেফ্রিজারেটরে পুরনো ও দুর্গন্ধযুক্ত মাংস, বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন দই এবং নিম্নমানের খাদ্য উপাদান।

অভিযান চলাকালে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা আক্তারকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে উচ্চস্বরে বলেন, “কার পারমিশনে পার্কভিউতে অভিযান করছেন? এসব দেখার দায়িত্ব আমার। কোনো জরিমানা করবেন না। জরিমানা করা হলে আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে।”

এই আচরণে অভিযানে থাকা কর্মকর্তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। উপস্থিত ছিলেন ক্যাব চট্টগ্রামের প্রতিনিধি আবু হানিফ নোমান। তিনি জানান, সিভিল সার্জন তার নিজের প্রতিনিধি ডা. শিব্বির আহমেদ প্রিন্সকেও ফোনে শাসিয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য অনিয়ম উদঘাটনের পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোনো জরিমানা না করে, এক সপ্তাহের মধ্যে অনিয়মগুলো সংশোধনের শর্তে হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক তালুকদার জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে একটি লিখিত মুচলেকা গ্রহণ করেন ম্যাজিস্ট্রেট। তবে, পরিবেশ অধিদপ্তর হাসপাতালটিকে আলাদাভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) প্রদান করে।

ঘটনার প্রতিবাদে এক বিবৃতি প্রকাশ করে ক্যাব চট্টগ্রাম। বিবৃতিতে বলা হয়, “একজন সরকারি কর্মকর্তার আইনগত দায়িত্ব পালনে অন্য আরেকজন কর্মকর্তার এ ধরনের হস্তক্ষেপ সরকারি আচরণবিধির চরম লঙ্ঘন। এটি রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও জনগণের স্বার্থ পরিপন্থী।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “চিকিৎসাসেবাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যদি প্রভাবশালী কেউ বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অনিয়ম আড়াল করতে চান, তা হলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?”

অভিযোগ বিষয়ে ডা. জাহাঙ্গীর আলমের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি অভিযোগটি অস্বীকার করে সময়ের কণ্ঠস্বর-কে মুঠোফোনে বলেন, “অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ম্যাজিস্ট্রেট তিন ঘণ্টা ধরে অভিযান পরিচালনা করেছেন। আমি কোনো ধরনের বাধা দিইনি।”

তবে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুমা আক্তার কণার মন্তব্য জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

সরকারি কর্মকর্তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে এমন বাধা ও হস্তক্ষেপ ভবিষ্যতে প্রশাসনিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দুর্বল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এ ঘটনায় দ্রুত তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মাঠপর্যায়ে দায়িত্বপালনে সরকারি কর্মকর্তারা নিরুৎসাহিত হবেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.