পৌষের শুরুতেও শীতের দেখা নেই এমন কথাবার্তার মধ্যে হুট করে শীত নামছে জাঁকিয়ে। এতে দেশের উত্তরের জনপদের জনজীবনের দৈনন্দিন ছন্দে ছেদ পড়েছে; কষ্ট পাচ্ছে দরিদ্র মানুষ।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে শীতের অনুভূতি তীব্র হয়েছে মূলত গত পাঁচ দিন ধরে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ার কারণে।
এ ধারা আগামী কয়েকদিন বজায় থাকলে আরেকটি শীতলতম জানুয়ারির দেখা মিলতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দিনের বেলায় ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মিলছে কম; ছয় থেকে আট ঘণ্টার বদলে তা দুই থেকে তিন ঘণ্টায় নেমে আসায় তাপমাত্রা কমেছে গত কয়েকদিনে। তবে এখনও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়নি।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভারতের দিল্লি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত কুয়াশার বিস্তৃতি লাভ করার কারণেই সূর্যের আলো ঢেকে গেছে। এ কারণে আগের কয়েকদিনের চেয়ে শীত লাগছে বেশি।
বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সন্ধ্যা ৬টার বুলেটিনে বলা হয়েছে, আন্তঃসীমান্ত কুয়াশার বিস্তৃতির কারণেই এটি ঘটছে। শুক্রবার পর্যন্ত দেশজুড়ে বিশেষ করে রাত ও ভোরের সময়, মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকতে পারে। এতে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে।
আবহাওয়াবিদ নাজমুল বলেন, শনিবার থেকে কুয়াশার স্থায়িত্ব কমে আসতে পারে। তবে মাসের শেষ দিকে বা জানুয়ারির শুরুতে একটি শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতি শীত মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন। রাতের তাপমাত্রাকেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়।
আর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃহস্পতিবার নেমে এসেছে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২২ ডিসেম্বরের ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৮ ডিগ্রি কম।
এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ১০
দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ২২ ডিসেম্বরের তুলনায় ২ দশমিক ২ ডিগ্রি কম।
এর বিপরীতে এদিন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত ২২ ডিসেম্বর উত্তর-পশ্চিমের এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিস্তীর্ণ এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকলে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে এবং তা দুদিনের বেশি স্থায়ী হলেই তা শৈত্যপ্রবাহ বলে ধরা হয়ে থাকে।
বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
চলতি শীতে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শুধু অল্প সময়ের জন্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর নিচে নেমেছিল। তবে এ তাপমাত্রা হ্রাস শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য হয়নি, কারণ তা একটি ছোট এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল।
শৈত্যপ্রবাহের জন্য একাধিক আবহাওয়া কেন্দ্রে একসঙ্গে নিম্ন তাপমাত্রা থাকতে হয় অথবা নির্দিষ্ট একটি এলাকায় দীর্ঘসময় ধরে নিম্ন তাপমাত্রা থাকতে হয়।
বৃহস্পতিবার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। দেশের অন্যত্র যা ছিল ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
হুট করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষরা বিশেষ করে শহরের বস্তি ও প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা গরম কাপড়ের অভাবে বেশি ভুগছে। নগরী ও মফস্বল শহরে অনেক মানুষ আবার খোলা আকাশের নিচে সড়কে বসবাস করে। শীতে তারাই ভুগছে বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত নভেম্বরে প্রকাশিত একটি জলবায়ু প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, শতাব্দীর শেষ নাগাদ শীত ধীরে ধীরে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শীতকাল থেকে শৈত্যপ্রবাহও ধীরে ধীরে সরে যাবে।