ঢাকার আকাশে রহস্যময় মিথেন গ্যাসের উৎস কী?

পৃথিবীর উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তনে মিথেন গ্যাস নির্গমন কমানোর জন্য বিজ্ঞানীরা বারবার তাগিদ দিয়ে আসছেন। প্রাকৃতিক গ্যাসের বাইরে সাধারণত বায়ুশূন্য স্থানে পচনশীল জিনিসপত্র পচে এই গ্যাস উৎপন্ন হয়।
বিজ্ঞানীরা বলেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় মিথেনের ৮৪ গুণ বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে দুটো গ্যাসেরই নির্গমন কমাতে হবে।
করোনাভাইরাস মহামারির লকডাউন সত্ত্বেও গত বছর বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস পাওয়া গেছে সেটা একটা রেকর্ড।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্লুমবার্গ মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বাংলাদেশের আকাশে প্রচুর মিথেন গ্যাসের অস্তিত্বের বিষয়টি উঠে আসে।
প্যারিসভিত্তিক কোম্পানি কেরস এসএএস স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা মিথেনের অন্যতম উৎস হিসেবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে চিহ্নিত করেছে। বলা হচ্ছে, ধান ক্ষেত, ময়লা আবর্জনার ভাগাড় বা ল্যান্ডফিল, কয়লার মজুত, পাইপলাইনের ছিদ্র দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস বের হয়ে আসা গ্যাসই এর উৎস।
তবে বাংলাদেশের অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, স্যাটেলাইটের তোলা ছবিতে যে মিথেন গ্যাস দেখা যাচ্ছে তার উৎস যে বাংলাদেশ তার পক্ষে বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণ নেই।
জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. আহসান উদ্দিন ডেইলি স্টার পত্রিকাকে বলেছেন, এই অঞ্চলের আরো অনেক দেশেই ধান চাষ হচ্ছে, ভরাট হচ্ছে জলাভূমি- তাই এই মিথেন গ্যাস যে বাংলাদেশেই উৎপন্ন হয়েছে সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
ড. মুজাম্মিল বলেন, ‘স্যাটেলাইটের ছবির ওপর ভিত্তি করে এই এলাকাটি চিহ্নিত করা হয়েছে। যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া এটা বের করা কঠিন। কার্বন আইসোটোপ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যেত এই মিথেন কোথা থেকে এসেছে।’
‘তবে স্যাটেলাইটের ছবি দেখে তার ধারণা হচ্ছে, যেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড় আছে সেখানে মিথেনের ঘনত্ব অনেক বেশি। আমরা যেখানে ময়লা ফেলছি, বিশেষ করে জৈব বর্জ্য, সেখান থেকে অনেক মিথেন নির্গত হয়’, বলেন তিনি।
ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় এ রকম বড় দুটো ভাগাড় বা ল্যান্ডফিল রয়েছে যেখানে শহরের সব বর্জ্য নিয়ে ফেলা হয়। একটি ঢাকার দক্ষিণে মাতুয়াইলে যা প্রায় ২৫ বছরের পুরনো। এর আয়তন ১০০ একর। অন্যটি উত্তরাঞ্চলীয় আমিনবাজার এলাকায় যা শুরু হয়েছে ২০০৭ সালে। এর আয়তন ৫২ একর।
ড. মুজাম্মিল বলছেন, ‘এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব করে মিথেনের নির্গমন কমানো যেতে পারে। বিশেষ করে জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করে ফেলতে হবে। রিসাইক্লিং করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’
এই মিথেন গ্যাসের নির্গমন কীভাবে কমানো সম্ভব এবং বাংলাদেশ তাতে কী ভূমিকা রাখতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মালিহা মুজাম্মিল বলেন, ‘মিথেন গ্যাসের যেসব উৎস যেমন ধানক্ষেত, আবর্জনার ভাগাড়, গ্যাস পাইপের ছিদ্র, কয়লার মজুত- এসব বদলানোর ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে। কৃষিকাজে চাষের ক্ষেত্রে ফসলের বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। তাহলে হয়তো মিথেনের নির্গমন কিছুটা কমে আসবে।’
মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.