আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্বাধীনতা পদক গ্রহন করলেন পুত্র জাবেদ

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক এ ভূষিত চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পদক তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁর পুত্র সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির হাতে।

বৃহস্পতিবার গণভবনে স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নিজে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাত এ পদক গ্রহণ করেন।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি ও জাতীয় সংসদের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তার পাথরঘাটা জুপিটার হাউস থেকে সংগ্রাম কমিটির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামে আসার পর ওই হাউস থেকেই সাইক্লোস্টাইল করে প্রচার করা হয়। তার বাসা থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ সব জায়গায় পাঠানো হয়।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে যেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সদস্য ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি বিশ্বজনমত গড়তে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে যান। তিনি প্রথমে লন্ডনে যান। সেখান থেকে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে আমেরিকায় যান। ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হন এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণে ভূমিকা রাখেন।

তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।

স্বাধীনতার পর তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দল পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় কারাভোগসহ নির্যাতনের শিকার হন তিনি।

তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা আসন থেকে ১৯৭০, ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ছিলেন একজন শিল্পোদ্যোক্তা। তিনি ১৯৬৫ সালে ব্যবসা শুরু করেন। স্বাধীনতার পূর্বে চট্টগ্রাম নগরীর বাটালি রোডে রয়েল ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে আসিফ স্টিল মিল, জাভেদ স্টিল মিল, আসিফ সিনথেটিক, প্যান আম বনস্পতি, আফরোজা অয়েল মিল, বেঙ্গল সিনথেটিক প্রোডাক্টসহ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এছাড়া জামান শিল্প গোষ্ঠী ও বিদেশি মালিকানাধীন আরামিট মিল ক্রয় করেন এবং পরবর্তীকালে আরামিট গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন।

এর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসরকারী ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি দুই দফা চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি এ ব্যবসায়ী নেতা দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি ছিলেন। তিনি ওআইসিভুক্ত দেশের চেম্বার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ৭৭ জাতি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০১২ সালে ৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর আনোয়ারা আসন থেকে তার বড়পুত্র সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য হয়ে বর্তমান সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.