চন্দনাইশে বেড়েছে ডায়রিয়া-জ্বরের প্রকোপ

নিউজ ডেস্ক

তীব্র তাপদাহে চন্দনাইশে প্রকোপ বেড়েছে ডায়রিয়া আর জ্বরের। উপজেলার দুটি সরকারি হাসপাতালে ইনডোর এবং আউটডোরের রোগী বাড়ছে দিনদিন। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও অর্ধ-শতাধিক। সরকারি হাসপাতালে বেড না পেয়ে রোগীরা ঠাঁই নিয়েছেন হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে। পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ থাকলেও অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক-নার্স আর ব্রাদারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু-নারী-বৃদ্ধ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে তীব্র তাপদাহ আর খাবার দাবারে অসেচতনার কারণে ডায়রিয়া আর জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত এক সপ্তাহে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক ডায়রিয়া রোগী। গত সপ্তাহে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় ১২৫ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন আরও ২৫ থেকে ৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ১৫ জন।

অন্যদিকে দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে প্রায় অর্ধ-শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় সবাই। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮ থেকে ১০ জন রোগী। এরমধ্যে ৫জন ভর্তি হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।

চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের বেড রোগীতে পরিপূর্ণ থাকায় রোগীরা ঠাঁই নিয়েছেন হাসপাতালের মেঝেসহ আশপাশের বারান্দায়। রোগী বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক-নার্স-ব্রাদাররা। পাশাপাশি বহির্বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে আছে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা শত শত রোগী। দুই হাসপাতালেই বেড সংকট থাকলেও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুত আছে পর্যাপ্ত সংখ্যক।

ডায়রিয়া এবং জ্বরে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া রাজু নামে এক রোগী জানান, গত সোমবার খাবার পরে শরীরে জ্বর আসে তার। পরে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা শুরু হয়। সকালে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। বেড সংকটের কারণে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন গত দুদিন ধরে।

অন্যদিকে, উপজেলার গাছবাড়িয়া এলাকার থেকে আগত এক রোগীর স্বজন নাছির উদ্দিন জানান, আমার ছেলের বয়স হলো ১বছর ৭ মাস। সে কয়েকদিন ধরে পাতলা পায়খানা ও জ্বরে ভূগছিল। সামলাতে না পেরে তাকে হাসপাতালে গতকাল ভর্তি করেছি। এখানে খাবার স্যালাইন ও চিকিৎসা ভালো পেয়ে একটু সুস্থবোধ করছে।

চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র স্টাফ নার্স জাহানারা বেগম জানান, দিন যত বাড়ছে রোগীর চাপ তত বাড়ছে। ডায়রিয়ার রোগীদের চাপে হাসপাতালের ফ্লোরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের চাপের কারণে প্রায়ই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য আরও বেশি আসন বরাদ্দ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা.  ফারজানা কালাম বলেন, বর্হিবিভাগে যতরোগী দেখেছি প্রায়ই জ্বরে আক্রান্ত। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এ ধরনের রোগ দেখা দেয়। ভাইরাস জ্বরের পাশাপাশি সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা হয়। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে জ্বর সেরে যায়।

চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবু রাশেদ মোহাম্মদ নুরুদ্দিন বলেন,  অতিরিক্ত গরমের কারণে একটু ডায়রিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তবে আমাদের ডায়রিয়ার চিকিৎসার কোন ত্রুটি হচ্ছে না। আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। খাবার স্যালাইনসহ ডায়রিয়া রোগীদের কোন সংকট এ মুহুর্তে হাসপাতালে নেই। সতর্কতা নিয়ে বাইরে চলাচল করতে হবে।

অন্যদিকে দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব আক্রান্ত রোগীদের বাইরের খাবার পরিহার করে তরলজাত খাবার খেতে পরামর্শ দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.